দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রশ্নে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিলের খবরে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। খবর পেয়েই তাঁরা শহরের ঝিলটুলী মহল্লায় অবস্থিত এ কে আজাদের বাড়িতে ভিড় করছেন। যদিও সমর্থকদের সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এ কে আজাদ।
এদিকে প্রার্থিতা বাতিলের খবরে শামীম হকের সমর্থকদের মধ্যে হতাশা দেখা গেছে, তবে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতারা।
শামীম হক ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি ফরিদপুর-৩ আসনে এবার দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ কে আজাদ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
শামীম হকের বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগ এনে ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন এ কে আজাদ। এর পরদিন এ কে আজাদ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক—এ অভিযোগ এনে নির্বাচনে কমিশনে আপিল করেন শামীম হক। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশন এ কে আজাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে। অন্যদিকে দ্বৈত নাগরিক প্রশ্নে শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়।
সংবিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অযোগ্য।
শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিলের খবর ছড়িয়ে পড়লে ফরিদপুরে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে মানুষকে জটলা করে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে দেখা গেছে।
আজ বেলা পৌনে ১২টার দিকে শহরের ঝিলটুলী মহল্লায় অবস্থিত এ কে আজাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, উঠানে লোকে লোকারণ্য। উচ্ছ্বসিত নেতা-কর্মীরা এ কে আজাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। কেউ করমর্দন, কেউ কোলাকুলি করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন। উল্লসিত সমর্থকদের ঠেকাতে একপর্যায়ে বাড়িতে প্রবেশের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সমর্থকদের দাবির মুখে এ কে আজাদ বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের একটি বিজয় হলেও চূড়ান্ত বিজয় আসেনি। আইনে আরও দুটি ধাপ রয়েছে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টেও বিষয়টি যেতে পারে।’ তিনি সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো মিছিল বা উল্লাস করা যাবে না। সামজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কোনো আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়া যাবে না। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
এদিকে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের আলীপুর মহল্লায় অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শামীম হকের কিছু সমর্থক বিষণ্ন মুখে বসে আছেন। এরপর কী হবে, তা নিয়েই চলছে তাঁদের আলোচনা।
নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানার জন্য প্রার্থী শামীম হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। অবশ্য জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আলী আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শামীম হকের দ্বৈত নাগরিকত্ব প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। আজই এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হবে।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ আপিলে আমরা ন্যায়বিচার পাব।’
এ কে আজাদের সমর্থক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ বলেন, ‘শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে অখুশি। নির্বাচনে তিনি কত ভোট পেতেন, তা দেখার সুযোগ নষ্ট হয়ে গেল। এখন এ পরিস্থিতিতে মানুষ ভোটকেন্দ্রে সেভাবে আসবে কি না, তা নিয়ে আমি সন্ধিহান।’