পরিবারের চারজনকে হারিয়ে বাক্‌রুদ্ধ হালিমা বেগম

সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের চার সদস্যকে হারিয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের হালিমা বেগমের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

২০ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর হালিমা বেগমের মেঝ ছেলে রেজাউল করিম জামাল মৃধা সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেন। তিন বোন ও ছোট ভাই এনামূল হকের (৩২) বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন জামাল। কিন্তু সেই জামাল, এনামূল হকসহ পরিবারের চারজন নিহত হওয়ার খবরে বাক্‌রুদ্ধ হালিমা বেগম।

বুধবার রাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ট্রাক ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে জামাল (৪৫) ও এনামূল হক খোকনের সঙ্গে জামালের স্ত্রী কামরুন নাহার (৪০) ও তাঁর ছেলে কাওসার আহমেদও মারা যান। এতে তাঁরা যে গাড়িতে সিলেটে গিয়েছিলেন, সেই গাড়ির চালকও মারা গেছেন।

হালিমা বেগমের (৮০) বাড়ি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের চৌরাস্তা এলাকায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন হালিমা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবাই শোকে মুহ্যমান। জামালের ছোট ভাই খোকনের স্ত্রী ইলমা বেগম (২১) তার দেড় বছরের কন্যা মিতাহুলকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

আর বাইরে জামালের মা হালিমা বেগম দুই ছেলের নাম ধরে জামাল-খোকন বলে কাঁদছিল। হাালিমা বেগম কাঁদতে কাঁদতে জানান, এবারও ঈদের আগে তাঁকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন জামাল। বলেছিলেন, কোরবানিতে বাড়িতে আসবেন। কিন্তু এই দুর্ঘটনা শেষ করে দিয়েছে সব আশা।  

জামাল মৃধা ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান ও খোকন মৃধা পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। জামালের ছেলে কাওসার আহমেদ সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

হালিমার স্বামী মৌজে আলী মৃধা মারা যাওয়ার পর পুরো সংসারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন জামাল। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে যান জামাল। তিন বোনকেও বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখন কে তাদের দেখবে বলে কেঁদে ফেলেন হালিমা।

জামাল ও এনামূলের মামা মো. সোনা মিয়া জানান, জামাল মৃধা ঢাকার সাভারে পরিবার নিয়ে থাকতেন। জামাল মৃধা ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান ও খোকন মৃধা পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। জামালের ছেলে কাওসার আহমেদ সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। কাওসারের মানত থাকায় জামাল প্রাইভেটকারে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে যান এবং সেখান থেকে ফিরে আসার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ রাত ১১টায় জামাল মৃধা তার মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছিল বলে জানান তিনি।

গলাচিপা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন খবর পেয়ে নিহতদের বাড়িতে যান এবং সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনি জানান, ওই চারজনের মরদেহ গ্রহণ করতে জামালের খালাতো ভাই ফেরদৌস আহমেদ এখন শায়েস্তাগঞ্জে রয়েছেন। শুক্রবার সকালে এলাকায় তাঁদের মরদেহগুলো আসবে।