কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আজ সোমবার সন্ধ্যায় আরও শতাধিক মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পালিয়ে এসেছেন। এর আগে দুপুরে ২৯ জন বিজিপি সদস্য আশ্রয় নিয়েছিলেন।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দুপুরে প্রথমে ২৯ জন বিজিপি সদস্য জামছড়ি সীমান্তের ৪৫ নম্বর সীমান্ত পিলারের এলাকায় দিয়ে চলে আসেন। তাঁরা নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির ১১ ব্যাটালিয়নের আওতায় জামছড়ি সীমান্তচৌকিতে আশ্রয় নিতে আসার কথা বলে। তখন বিজিবি পালিয়ে আসা ২৯ জন বিজিপি সদস্যকে নিরস্ত্র করে পার্শ্ববর্তী নুরুল আলমের চায়ের বাগানে রেখে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে।
সন্ধ্যার আগে ওই ২৯ জন বিজিপি সদস্যকে উপজেলা সদরের দিকে নিয়ে আসার কিছুক্ষণ পর সীমান্ত দিয়ে আরও শতাধিক বিজিপি সদস্য পালিয়ে আসেন। জামছড়ি সীমান্তচৌকির বিজিবি সদস্যরা বিষয়টি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ককে জানালে আবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সীমান্তে যান। পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের এই প্রতিবেদন লেখার সময় নিরস্ত্র করা হচ্ছিল বলে বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সন্ধ্যায় পালিয়ে আসা বিজিপি সদস্যদের সংখ্যা জানা না গেলে কোনো কোনো সূত্র জানিয়েছে, ১৪৬ জন হতে পারে। জেলা প্রশাসকও জানিয়েছেন বিজিপির সন্ধ্যায় পালিয়ে আসাদের সংখ্যা ১৩০ থেকে ১৪০ হতে পারে। সন্ধ্যায় পালিয়ে আসাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত দুজন রয়েছেন বলেও কোনো কোনো সূত্রে জানা গেছে।
বিজিবির কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে বিজিপির সঙ্গে রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) বিভিন্ন ক্যাম্প ও সীমান্তচৌকিতে যুদ্ধ চলছে। সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি ও ভেতরে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে বিজিপি সদস্যরা সম্ভবত ছোট ছোট দলে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন। ওই বিচ্ছিন্ন দলগুলোর বিরুদ্ধে পরে আবার আরাকান আর্মি অভিযান চালাচ্ছে। আরাকান আর্মির তৎপরতা, খাদ্য ও চিকিৎসা–সংকটে টিকে থাকতে না পেরে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসছেন। নাম–ঠিকানাসহ পরিচয় লিপিবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত সঠিক সংখ্যা জানা যাবে না বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার দুপুরে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিপির কয়েক দিন ধরে গোলাগুলি চলছে। পরে আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে বিজিপির সদস্যরা আশ্রয় নিতে এসেছেন। দুই পক্ষের লড়াইয়ে কয়েক দিন বিজিপির বেশ কয়েকটি সীমান্তচৌকি ও ক্যাম্পের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা তীব্র খাবারদাবার ও চিকিৎসা–সংকটে আর টিকে থাকতে পারছেন না বলে সীমান্তের ওপার থেকে জানা যাচ্ছে।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জেরে ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসে বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জন। যার মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাঁদের সবাইকে ফেরত পাঠানো হয়।