সিলেট আ.লীগে দলাদলির সম্ভাবনা জিরো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী

সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০২ সালে। ৪২টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত এ নগরে আগামী ২১ জুন পঞ্চমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নির্বাচন নিয়ে তিনি প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশের সঙ্গে কথা বলেছেন।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
প্রশ্ন

আপনিসহ আওয়ামী লীগে ১১ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। জল্পনাকল্পনা শেষে সবাইকে ডিঙিয়ে শেষ পর্যন্ত আপনিই মনোনয়ন পেলেন। প্রতিক্রিয়া কী?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি খুবই আনন্দিত এই কারণে, দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। তবে অন্য যাঁরা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন, তাঁরা সবাই পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা। যেহেতু আমাদের দল সাংগঠনিকভাবে অনেক বড়, তাই স্বাভাবিকভাবেই এখানে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি। তবে সবার সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। সবাই আমাকে অভিনন্দিত করেছেন। তাঁরা আমার প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়েছেন। সবার মধ্যেই সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ ছিল। এ জন্য আমার আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করছে।

প্রশ্ন

মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হওয়ার শঙ্কা করছেন অনেকে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি শতভাগ নিশ্চিত, কেউ বিরোধিতা করবেন না। কারণ, দলের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ। সবাই মিলেই দল। তাই নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে সবাই আমার পাশে থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এ ছাড়া সিলেটের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সব নেতা-কর্মী এখন উজ্জীবিত। গত ১০ বছর সিলেট নগরে মেয়র পদে আমাদের কেউ নির্বাচিত হননি। এ কারণে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা মন দিয়ে এখানে দলের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে চাইছেন।

প্রশ্ন

ধরুন, আওয়ামী লীগ থেকে কোনো নেতাই ‘বিদ্রোহী’ হলেন না। তবে ভেতরে-ভেতরে কী দলাদলি মাথাচাড়া দিতে পারে?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: না, এমনটা হবে না। আমার প্রায় প্রতিদিনই সবার সঙ্গে কথা হচ্ছে। সবাই খুব আন্তরিক ও নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে নিজেদের সর্বোচ্চ শ্রম দেবেন। আওয়ামী লীগে কোনো বিভেদ নেই। যাঁরা মনোনয়ন চেয়েছেন, তাঁরা অনেকে সিনিয়র (জ্যেষ্ঠ) মানুষ, তাঁদের যোগ্যতা আছে, তাঁরা এখানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এটা তো অন্যায় কিছু নয়। তাঁদের আমি সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। তাঁদের আমি মাথায় তুলে রাখব সব সময়। তো, দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমার বিষয়ে। এ অবস্থায় তাঁরা আমার ব্যাপারে খুব পজিটিভ (ইতিবাচক)। তাঁরা কেউ বিরোধিতা করবেন না। সিলেট আওয়ামী লীগে দলাদলির সম্ভাবনা জিরো।

প্রশ্ন

বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, তাঁর দল সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না...

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমরা চাই, বিএনপি নির্বাচনে আসুক। বিএনপি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে না আসায় ধীরে ধীরে জনগণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। নির্বাচনপ্রক্রিয়া ছাড়া বিকল্প কিছু নেই। তাই তাঁদের অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন

সিলেটে তো এখন বিএনপিদলীয় মেয়র। টানা দুই মেয়াদে মেয়র তিনি। শোনা যাচ্ছে, বিএনপি নির্বাচনে না এলে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কী মনে হচ্ছে আপনার?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: এটা একান্তই তাঁর (আরিফুল হক চৌধুরী) ব্যক্তিগত বিষয়। তাঁর মনের ভেতরের খবর তো আমার পক্ষে জানা কঠিন। তবে আমি চাই, একটা ফলপ্রসূ নির্বাচন হোক। সিলেটে একটা ঐতিহ্য আছে, আমরা সবাই সহনশীল। আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চাই।

প্রশ্ন

যদি বর্তমান মেয়র নির্বাচনে আসেন, তাহলে আপনি জয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি খুবই আশাবাদী।

প্রশ্ন

মেয়র নির্বাচিত হলে এ নগরকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান? নগরের উন্নয়নে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছেন, একইভাবে আমি এ সিলেট নগরকে স্মার্ট নগরে পরিণত করতে চাই। বিদ্যুতের তারসহ যাবতীয় তার মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া, বন্যার সমস্যার স্থায়ী সমাধানে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ নানা পরিকল্পিত উদ্যোগ নেব। পরিকল্পিত উন্নয়ন ছাড়া কোনোভাবেই এ নগরকে আদর্শ নগরে পরিণত করা যাবে না। সিলেট নগরে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। সরকার টাকা দিয়েছে, মেয়র সাহেব কাজও করেছেন। তবে সব কাজ করেছেন অপরিকল্পিতভাবে। যে কারণে কাজ হওয়া সত্ত্বেও সমস্যার কার্যকর সমাধান হয়নি। তাই পরিকল্পিতভাবে এ নগরকে গড়ে তুলতে চাই। এ ছাড়া নতুনভাবেও অনেকগুলো ওয়ার্ড এবার নগরে যুক্ত হয়েছে। তাই প্রচুর উন্নয়নকাজের প্রয়োজন পড়বে। মেয়র নির্বাচিত হলে এটাকে লক্ষ্য ধরেই এগোব।

প্রশ্ন

আপনি দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন...

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি সিলেটের ছেলে। এ শহরে ছাত্ররাজনীতি করেছি, এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। প্রতিটি নির্বাচনে আমি সিলেটে থাকি। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করি। গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নগরের প্রায় সব কটি পাড়া-মহল্লা চষে বেড়িয়েছি। এ ছাড়া আমি যে লন্ডনে থাকি, সেখানেও তো সিলেটেরই রাজনীতি করি। এর পাশাপাশি কিছুদিন পরপরই নিয়মিত সিলেটে আসি। আমার সব সময় রাজনীতিতেই ব্যয় করছি। তাই এমন প্রশ্ন আসাটা অবান্তর। মূলত সিলেট ঘিরেই আমার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সিলেট থেকে কখনোই আমি বিচ্ছিন্ন ছিলাম না।