রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে ফারুক সরদার (২৮) নামের তরুণকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে মানিকগঞ্জ থেকে একজন এবং রাতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা থেকে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার দুজনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ৪ নম্বর আসামি ফজলুল হক ওরফে ফজল শেখ (৩৯) উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া সোহরাব মণ্ডলপাড়ার সোনা উল্লাহ শেখের ছেলে। আর সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার ইউসুফ মণ্ডল (৩৩) দৌলতদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং হোসেন মণ্ডলপাড়ার মোহন মণ্ডলের ছেলে। ফজলুল হকের শ্যালক হলেন ইউসুফ। এর আগে ওই হত্যাকাণ্ডে হুমায়ুন (২৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত ফারুক সরদার উপজেলার উত্তর দৌলতদিয়া সোহরাব মণ্ডলপাড়ার পল্লিচিকিৎসক শহিদুল ইসলামের ছেলে। এ ছাড়া মোহন মণ্ডলের ভায়রার ছেলে। ফারুক ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী ছিলেন।
গত শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাঁর সঙ্গে থাকা স্থানীয় শামসু মাস্টারপাড়ার সালাম মোল্লার ছেলে বন্ধু আলামিন মোল্লা (২৫) এগিয়ে গেলে তাঁকেও কুপিয়ে জখম করা হয়।
এ ঘটনায় ফারুকের স্ত্রী সুমি আক্তার বাদী হয়ে গতকাল গোয়ালন্দ ঘাট থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সোহরাব মণ্ডলপাড়ার রমজান ফকিরের ছেলে রিপন ফকির (২৬), ভাই মমিন ফকির (২৭), চাচাতো ভাই জহুরুল ফকির (২৩), আত্মীয় ফজলুল হক, কাশেম ফকিরকে (৪০) আসামি করা হয়। এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ববিরোধের জের ধরে ফারুককে হত্যা করা হয়েছে। প্রধান আসামি রিপন ফকির মোহন মণ্ডলের ভাগনিজামাই।
এজাহারে বলা হয়েছে, প্রায় এক বছর আগে ফারুক ও রিপন যৌথভাবে স্থানীয় বাহির চর দৌলতদিয়ায় মাটি বিক্রির ব্যবসা করতেন। ফারুকের প্রায় ৭০ হাজার টাকা রিপনের কাছে পাওনা ছিল। বিষয়টি নিয়ে রিপন ও ফারুকের বিরোধ ছিল। দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দৌলতদিয়া রেলস্টেশনের মেলা থেকে রিপন ও তাঁর লোকজন চাঁদা তোলেন। এই কাজে তাঁদের বাধা হয়ে দাঁড়ান ফারুক। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয় শহীদ মিনারের সামনে ফারুকের সঙ্গে রিপন, রেজাউল ও শিপনের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
প্রতিশোধ নিতে ফারুক লোকজন নিয়ে শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে যৌনপল্লিতে রিপনের পান–সিগারেটের দোকানের সামনে যান। তখন রিপন ও তাঁর লোকজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুকের মাথা, পিঠ, হাত ও পায়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। এ সময় আলামিনকেও কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁদের উদ্ধার করে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ফারুককে মৃত ঘোষণা করেন।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার দুজনকে আজ মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হবে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।