কাউনিয়ায় আ.লীগ কর্মী নিহতের ঘটনায় ভাইস চেয়ারম্যানের বিচার দাবি

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান। বুধবার বিকেলে রংপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের কাউনিয়ায় ঈদ উপলক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির মতবিনিময় সভায় স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

বুধবার বিকেলে রংপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ আবদুল হান্নান। এতে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুর রাজ্জাক এবং তাঁর বড় ভাই হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদের বিচার দাবি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ আবদুল হান্নান বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম ওরফে মায়ার নামে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হারাগাছের বাসিন্দা মাজেদ আলীর নামে স্লোগান না দেওয়ায় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক এবং তাঁর ভাই ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহমেদের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী সেখানে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটিয়ে মন্ত্রীর অনুষ্ঠান পণ্ড করেন।

আবদুল হান্নান আরও বলেন, কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ যাবতীয় কর্মকাণ্ড দলীয় গঠনন্ত্র অনুযায়ী হয়ে আসছে। কিন্তু আবদুর রাজ্জাক ও তাঁর বড় ভাই রাজু আহমেদ কতিপয় সন্ত্রাসী নিয়ে দলীয় কার্যক্রমে বাধা প্রদানসহ নানা ষড়যন্ত্র করছেন। তাঁরা উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলেছেন। ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যার পর তাঁরা দুই ভাই একদল সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অস্ত্রশন্ত্র নিয়ে খানসামা হাটে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা ইমামগঞ্জ স্কুলের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সোনা মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে হেয় করার জন্য এ ধরনের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এটি তাঁদের মনগড়া কথা। আমি দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছি। পরে জেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। সম্প্রতি জেলা আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে আমাকে।’

গত সোমবার বিকেলে হারাগাছে কাউনিয়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করতে উপজেলার খানসামা হাটের ইমামগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে যান বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য টিপু মুনশি। মন্ত্রী মাঠে এলে নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মতবিনিময় সভা না করে চলে যান টিপু মুনশি।

এরপর রাত আটটার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে সোনা মিয়া নিহত হন। তিনি উপজেলার হারাগাছের নাজিরদহ এলাকার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে এবং হারাগাছ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। সোনা মিয়া কাউনিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়ার অনুসারী।

এ ঘটনায় বুধবার ৭৬ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করে কাউনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন সোনা মিয়ার বড় ছেলে আক্তারুজ্জামান। মামলায় ১ ও ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ও তাঁর বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহমেদকে। মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) সুলতানা রাজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে কাউনিয়ার পরিস্থিতি শান্ত। সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।