লালমনিরহাটে বিএনপির হরতাল চলাকালে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ৫

লালমনিরহাট জেলার মানচিত্র
লালমনিরহাট জেলার মানচিত্র

সারা দেশে বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে লালমনিরহাটে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর থানায় দায়ের করা মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) স্বপন কুমার সরকার মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় গতকাল রাতে লালমনিরহাট শহর ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের লালমনিরহাট আদালতে সোপর্দ করা হবে। মামলার তদন্তের পাশাপাশি অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সদর থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সদর থানায় দায়ের হওয়া মামলার বাদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুহুল ইসলাম। এজাহারে বিএনপির ডাকা হরতালের সময় পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দান, সরকারি আদেশ অমান্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল হিসেবে সদর উপজেলার মহেন্দ্র নগর চৌরাস্তা থেকে অনুমানিক ৬০-৭০ গজ পূর্ব দিকে বড়বাড়িগামী পাকা সড়কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয় গতকাল সকাল সাড়ে ৯টা।

এই মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন লালমনিরহাট পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মকবুল হোসেন (৫৯), ৫ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম (৪২), সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাই (৩৯), সদর উপজেলার কাজীর চওড়া গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপি কর্মী শাকিরুল ইসলাম (৩৩) এবং মহেন্দ্র নগরের বুড়ির বাজারের ডেকোরেটরের দোকানদার ও বিএনপি কর্মী মো. লিটন মিয়া (৩৭)।

উল্লেখ্য, গতকাল সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজার এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা আহত হন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়। জাহাঙ্গীর আলম (৪৮) নামের ওই ব্যক্তি সদর উপজেলা লোড-আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এ ঘটনার পর গতকাল বিকেলে জেলা বিএনপির কার্যালয়, দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব ওরফে দুলুর বাসভবন ও রেলস্টেশন রোডে শ্রমিক দলের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রথমে শহরের বিডিআর রোডে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ও ব্যানার ভাঙচুর করেন। পরে তাঁরা শহরের মিশন মোড় এলাকায় আসাদুল হাবিবের বাসভবনের ফটক ভেঙে আসবাব ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেন। পরে দলবল নিয়ে তাঁরা শহরের রেলস্টেশন রোডে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কার্যালয়ে গিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং আসবাব ভাঙচুর করে আগুন দেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমানের দাবি, মহেন্দ্রনগর বাজারে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে কুপিয়ে হত্যা করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। সেখান থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে নিজেরাই নিজেদের স্থাপনায় ক্ষতি করে তারা আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমানের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ‘শান্তি’ সমাবেশের নামে সারা শহরে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। দলটির নেতা-কর্মীরা দলবল নিয়ে বিএনপির তিনটি স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন।