নির্বাচনের নেশায় পেয়ে বসা মুকুলের সাফকথা, এটাই শেষ নির্বাচন

সঙ্গে কর্মী-সমর্থক নেই। একা একা নিজের লিফলেট বিতরণ করছেন। মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইছেন। সব ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হয়েছেন সংসদ নির্বাচনেও। নির্বাচন এলেই তিনি প্রার্থী হয়ে যান। কিন্তু কখনো জয়ী হতে পারেননি। প্রতিবারই তাঁর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

নির্বাচনের নেশায় পেয়ে বসা ওই ব্যক্তির নাম নজরুল ইসলাম ওরফে মুকুল মৃধা। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক। রাজাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। নির্বাচনে নজরুল ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে আরও চারজন প্রার্থী লড়ছেন।

নজরুল ইসলাম প্রতীক পাওয়ার পর থেকে উপজেলার সাতুরিয়া, শুক্তাগড়, বড়ইয়া, গালুয়া, লেবুবুনিয়া, মঠবাড়ি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। গত বুধবার দুপুরে রাজাপুরের গালুয়া ইউনিয়নের খায়েরহাট বাজারে গণসংযোগ করেন তিনি। এ সময় এই প্রতিবেদকের কাছে বারবার ভোটে দাঁড়ানোর কারণ জানালেন।

দল ও দলীয় নেতাদের প্রতি ক্ষোভ থেকে বারবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন নজরুল। এ জন্য পরিবারের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন। বারবার ভোটে দাঁড়িয়ে অর্থসম্পদ নষ্ট করায় স্ত্রী-সন্তানদেরও তাঁর প্রতি ক্ষোভ আছে। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ভোটাররা নিজেদের ইচ্ছেমতো ভোট দিতে পারেননি। তাঁরা দলীয় চাপের মুখে আমাকে ভোট দেননি। তা ছাড়া আমি কাউকে কোনো টাকাও দিতে পারিনি।’

২০১১ ও ২০১৪ সালে রাজাপুর সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দুবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি নজরুল ইসলাম। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে দুবারই তিনি পরাজিত হন। এরপর ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর দলীয় চাপে প্রত্যাহার করে নেন। সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে রাজাপুর উপজেলার (৩ নম্বর ওয়ার্ড) সদস্য পদে নির্বাচন করে একটি ভোটও পাননি।

নজরুল ইসলাম ওরফে মুকুল মৃধা

নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সব নির্বাচনেই দলের মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। আমি নির্বাচিত হয়ে মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান হয়েও মনোনয়ন পাই না। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও কাঙ্ক্ষিত ভোট পাচ্ছি না। আমি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিয়ে অপমানিত হতে চাই না। এই নির্বাচন করে আমি পরিবার, ব্যবসা-বাণিজ্য, মানসম্মান সব নষ্ট করেছি। তাই এই পথে আমি আর থাকব না। এটাই আমার শেষ নির্বাচন।’

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে রাজাপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বঙ্গবন্ধু চারজন প্রার্থীর মধ্য থেকে তাঁর চাচাতো ভাই ঈসমাইল হোসেন মৃধাকে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ‍তিনি ঝালকাঠি-রাজাপুরের প্রথম সংসদ সদস্য। এটা তাঁর জন্য কাল হয়েছে। যতবার তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু তাঁকে মনোনয়নবঞ্চিত করেছেন। কারণ, ’৭০ সালের নির্বাচনে তিনি নৌকা চেয়ে পাননি। এখন হাইব্রিড নেতারা দলের সমর্থন পান বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নজরুলের ছেলে শাকিল মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটাই আমার বাবার শেষ নির্বাচন। আমার বাবা একজন সহজ-সরল মানুষ। প্রতিটি নির্বাচনে তাঁর অনেক অর্থসম্পদ ব্যয় হয়েছে। তাঁকে আর পরিবারের পক্ষ থেকে ভোটে দাঁড়াতে দেব না।’

রাজাপুরের গালুয়া ইউনিয়নের খায়েরহাট বাজারের দোকানি মো. সেলিম মিয়া বলেন, মুকুল মৃধা ভালো মানুষ। তিনি আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতা। তাঁকে একবার সুযোগ দেওয়া উচিত।