সারা দেশে হত্যা-লুণ্ঠনের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

সারা দেশে সংঘটিত হত্যা-লুণ্ঠন-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। সোমবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সারা দেশে সংঘটিত হত্যা-লুণ্ঠন-অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধন করেন তাঁরা।

মানববন্ধনে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁরা দেশে সংগঠিত হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে জড়িত ব্যক্তিদের সাবেক সরকারের রেখে যাওয়া দুষ্কৃতকারী বলে দাবি করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক মেহরাব সিফাত মানববন্ধন কর্মসূচি সঞ্চালনা করেন। কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিবলী নোমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয়, বাসাবাড়িতে হামলা, লুটতরাজের ঘটনা ঘটছে। রাজধানী ঢাকা শহরেও আমরা দেখতে পাচ্ছি, ডাকাত–আতঙ্কে মানুষ দিন কাটাচ্ছেন। বাংলাদেশে যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন হয়েছে, তখন এই সংখ্যালঘু ট্রাম্প কার্ডটি ব্যবহৃত হয়েছে। এটিকে ইস্যু করে বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রোপাগান্ডা সৃষ্টি করছে। আমাদের এই প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।’

বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘৫ আগস্ট স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। তাঁর আগেও একজন স্বৈরশাসক ছিলেন, তিনি কিন্তু দেশ থেকে পালিয়ে যাননি। কিন্তু এই স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে চলে গেছেন। এর মানে বোঝায়, তিনি আসলে এ দেশের না, কোনো দলের না। তিনি ব্যক্তিচিন্তার বাইরে আর কোনো চিন্তা করেননি। আমরা দেখেছি, ডাকাত পড়ছে। কিন্তু বিশেষ বিশেষ অঞ্চলে ডাকাত পড়ে না। এরা আসলে কারা? এরা হচ্ছে স্বৈরশাসকের দুষ্কৃতকারী। এদের থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন করেন। সোমবার দুপুরে

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গুলি চালিয়েছেন। সেই অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে হবে। সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাঁদের ওপর যারা হামলা করছে, তারা যে দলেরই হোক, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যে অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। পলায়নকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্ট তাঁর নেতা-কর্মীদের ঢাকায় আসতে বলেছেন। আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে যে বিপ্লব ঘটেছে, সেটা রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।’

সমাপনী বক্তব্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুর রশিদ (জিতু) বলেন, ‘ছাত্র-জনতা মিলে স্বৈরাচার শাসককে পতন ঘটানো হয়েছে। কিন্তু ওই সরকারের দোসররা, সন্ত্রাসী বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, হত্যা করছে। এই সন্ত্রাসী বাহিনীকে আমরা ছাত্র-জনতা মিলে প্রতিহত করব। ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা পারভীন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আহসান লাবিব। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রব্বানী ও পারভীন জলী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমেনা ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক সালমা সাবিহা প্রমুখ।