জামালপুরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে জেলার দুটি উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার আংশিক বন্যাকবলিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে পানিবন্দী হয়েছেন প্রায় ৩১ হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বন্যার পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ইসলামপুরের ৮টি ইউনিয়ন, দেওয়ানগঞ্জের ৮টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার আংশিক এলাকার ৩৪ হাজার ৪২০ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। প্রায় ৮১০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ১২টি গরুর খামার বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ২৫টি পুকুর তলিয়ে গেছে। ২৫ বিদ্যালয় ও ২৫ কিলোমিটার রাস্তায় পানি উঠেছে। এ ছাড়া মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ হতদরিদ্র। তার মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী থাকায় আয়রোজগার নেই। অনেকেই কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে গেছেন। বেশির ভাগ লোকজন মাঠে কৃষিকাজ করে চলেন। কিন্তু বন্যার পানিতে সব মাঠ তলিয়ে গেছে। এ কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব অঞ্চলের মানুষ। অনেকের ঘরে খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
আজ সকাল ১০টার দিকে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এখন বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য সময়ের চেয়ে এবার খুব ধীরগতিতে পানি বাড়ছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি কমার সম্ভাবনা আছে। গত বুধবার থেকে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অনেকেই বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বড় ধরনের কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই।
ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, পুরো ইউনিয়নে ৩৩টি গ্রামের মধ্যে ২১টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। প্রায় ২০ হাজার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। এই দুর্ভোগ চলছে পাঁচ দিন ধরে। মানুষের তেমন কোনো কাজকর্ম নেই। এসব এলাকার মানুষ দিন আনে দিন খায়। পাঁচ দিন ধরে ঘরে বসা তাঁরা। সবার ঘরে খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এত মানুষের মধ্যে মাত্র ৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আর বাকি ২ মেট্রিক টন চাল আজ থেকে বিতরণ শুরু করা হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রীর প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু চাল দিলেই হবে না। এর সঙ্গে অন্যান্য উপকরণও দিতে হবে। একজন বন্যাকবলিত মানুষ শুধু চাল দিয়ে কী করবেন? সব জায়গায় পানি, কোথায় রান্না করবেন? কষ্ট করেও যদি রান্না করেন, তার সঙ্গে ন্যূনতম ডাল না থাকলে, তাঁরা ভাত খাবেন কী দিয়ে। ফলে চালের সঙ্গে অন্য কোনো উপকরণও দেওয়া দরকার।’
জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পানি কমার সম্ভাবনা আছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সব ধরনের সহযোগিতাও করা হচ্ছে। বন্যা মোকাবিলায় ৭টি উপজেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুকনা খাবারের প্যাকেট ও গোখাদ্য ক্রয়ের জন্য টাকা দেওয়া হচ্ছে।
যমুনার পানিতে গত রোববার রাত থেকে নদীতীরবর্তী চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে। এর আগে বুধবার থেকে ওই সব এলাকার বেশির ভাগ লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন পানিবন্দী কয়েকজন। তাঁদের ভাষ্য, নদীবেষ্টিত এলাকার বেশির ভাগ বাড়িতেই এখন পানি। বাড়ির আঙিনা ও রাস্তায় হাঁটুসমান পানি। এরই মধ্যে কেউ কেউ উঁচু স্থানে গবাদিপশু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ। অনেকেই পাঁচ দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। আবার অনেকেই তিন দিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। আবার নতুন করেও অনেকে পানিবন্দী হয়ে পড়ছেন। ঘরে খাবার না থাকায় তাঁদের অনাহারে দিন কাটছে। অপেক্ষা করছেন ত্রাণসামগ্রীর। দুর্গত এলাকার বেশির ভাগ অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত মানুষ যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।