সাবেক সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদের হাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমানের পোস্টার। গত শুক্রবার হোমনা উপজেলার পাথালিয়াকান্দিতে
সাবেক সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদের হাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমানের পোস্টার। গত শুক্রবার হোমনা উপজেলার পাথালিয়াকান্দিতে

হোমনা উপজেলা নির্বাচন

সাবেক এমপি সেলিমার হাতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পোস্টার, নানা আলোচনা

কুমিল্লায় হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম সিদ্দিকুর রহমানের (আবুল) সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদের (মেরী) দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তবে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমানকে সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।

সিদ্দিকুর রহমানের পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সেলিমা আহমাদ—এমন একটি ছবি পোস্ট করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে হোমনাসহ বিভিন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। হোমনায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন তিনজন। তাঁরা হলেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী রেহানা বেগম, মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী শহীদ উল্লাহ।

প্রার্থীদের মধ্যে রেহানা বেগম বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এবং কুমিল্লা উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য। তিনি কুমিল্লা-২ (হোমনা ও তিতাস) আসনের সংসদ সদস্য হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মজিদের স্ত্রী।
এ কে এম সিদ্দিকুর রহমান আবুল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শহীদ উল্লাহ কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ সরাসরি স্ত্রী রেহানা বেগমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেই। তবে সংসদ সদস্যের অনুসারীরা রেহানা বেগমের পক্ষে ভোটের মাঠে রয়েছেন। সিদ্দিকুর রহমান ২০১৯ সালেও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। তখন তিনি রেহানা বেগমকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। ওই নির্বাচনে রেহানা বেগম চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন।

এদিকে গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগ সেলিমা আহমাদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। আবদুল মজিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য পদে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন আবদুল মজিদের পক্ষে। এবার সিদ্দিকুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু সংসদ সদস্য মজিদ তাঁর পাশে নেই। এ অবস্থায় সেলিমা আহমাদ হঠাৎ সিদ্দিকুরের পক্ষে অবস্থান নেন।

এ নিয়ে কোনো ধরনের কথা বলব না। আমার সঙ্গে তো আজ (শনিবার) সকালে আরেক প্রার্থী শহীদ উল্লাহও দেখা করেছেন।
সেলিমা আহমাদ, সাবেক সংসদ সদস্য

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় হোমনা উপজেলার আসাদনগর ইউনিয়নের পাথালিয়াকান্দি গ্রামে সেলিমা আহমাদের বাড়িতে যান সিদ্দিকুর রহমান। তখন সিদ্দিকুর রহমানের মোটরসাইকেল প্রতীকের রঙিন পোস্টার হাতে সেলিমা আহমাদকে দেখা যায়। এ সময় জেলা পরিষদের সদস্য মহিউদ্দিন ও হোমনা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। রাতে ফেসবুকে ওই ছবি ছড়িয়ে পড়ে।

সিদ্দিকুর রহমানকে সমর্থন ও ওই ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিমা আহমাদ গতকাল শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘এ নিয়ে কোনো ধরনের কথা বলব না। আমার সঙ্গে তো আজ (শনিবার) সকালে আরেক প্রার্থী শহীদ উল্লাহও দেখা করেছেন।’

গতবারও রেহানা বেগমকে ছাড় দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছি। এবার স্যার (আবদুল মজিদ) এমপি হয়েছেন। আমি স্যারের জন্য কাজ করেছি। এবার প্রার্থী হয়েছি। ভেবেছিলাম স্যারের পরিবার আমাকে ছাড় দেবে। পরে সাবেক সংসদ সদস্য মহোদয় আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।
সিদ্দিকুর রহমান, চেয়ারম্যান প্রার্থী

এ সম্পর্কে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গতবারও রেহানা বেগমকে ছাড় দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে গেছি। এবার স্যার (আবদুল মজিদ) এমপি হয়েছেন। আমি স্যারের জন্য কাজ করেছি। এবার প্রার্থী হয়েছি। ভেবেছিলাম স্যারের পরিবার আমাকে ছাড় দেবে। কিন্তু তা হয়নি। পরে সাবেক সংসদ সদস্য মহোদয় আমাকে সমর্থন দিয়েছেন।’

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আবদুল মজিদ বলেন, রেহানা বেগম বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আছেন। জনসমর্থন, জনপ্রিয়তায় রেহানা অন্তত ৯০ শতাংশ ভোটারের মনে আছেন। সিদ্দিকুর রহমানের প্রার্থিতার বিষয়ে সংসদ সদস্য কোনো মন্তব্য করেননি।

চেয়ারম্যান প্রার্থী রেহানা বেগম বলেন, ‘এ নির্বাচনে প্রার্থিতা সবার জন্য উন্মুক্ত। অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে জিতব, ইনশা আল্লাহ।’