রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সরব ছাত্রদল–শিবির

রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে দুই সংগঠনের কার্যক্রমের বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) প্রজ্ঞাপন জারি করে ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল। দেখা গেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমও। এসব ঘটনায় দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিবিরোধী শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গত শুক্রবার কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদলের নাম ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছবি–সংবলিত পানির বোতল এবং দলের নাম লেখা কলম বিতরণ করেছেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। তাঁদের এ কার্যক্রম নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণাও চালান তাঁরা। ছাত্রদলের পাশাপাশি ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যালিপ্যাডের সামনের একটি দেয়ালে দেয়াললিখন করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের লোগো আঁকা হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম লেখা প্যাকেটে ভর্তি–ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের মধ্যে খেজুর বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী।

আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি করি। আমাদের কাজটা হলো উনার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া।
মো. আতিকুর রহমান, আহ্বায়ক, বাকৃবি ছাত্রদল

ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের এসব কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা। এতে যোগ দেন শাহজালাল ও শহীদ শামসুল হক হলের শিক্ষার্থীরাও। মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আসেন তাঁরা। এ সময় ‘রাজনীতির বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘রাজনীতির দোসররা হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী ফজলুল হক হলের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফজলুল হক হলে যে শিক্ষার্থীরা আগে ছাত্রলীগ করতেন, তাঁরাই এখন ছাত্রদলের রাজনীতি করার জন্য অন্যদের আহ্বান করছেন। অনেক দিন ধরে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে এই অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। শুক্রবার ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ছাত্রদলের নামে পানি বিতরণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটির প্রচারণা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন হলের শিক্ষার্থীরা। পরে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা।

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ব্যানারে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মৌন মিছিল হয়। সে সময় ছাত্রদলের ওই কার্যক্রমের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠান করার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ভালোভাবে বুঝতে পারেননি। তাঁরা সামনে এ ধরনের কাজ আর করবেন না। অথচ ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রদল তাঁদের নাম ব্যবহার করে পানি ও কলম বিতরণ করেছেন এবং সেটি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনেই।

শাহজালাল ও শামসুল হক হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রদলের নামে পানি ও কলম বিতরণের ঘটনাটি প্রশাসনকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রদলের এসব কর্মকাণ্ডকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমর্থন দিচ্ছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে অর্জিত এই রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে আবার লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির আবির্ভাবকে কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

আমরা দাওয়াতি কার্যক্রম করেছি। কোনো শোডাউন, মৌন মিছিল বা দলীয় নামে ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনো কিছু বিতরণ করিনি।
ফাজায়েল আহমেদ, সভাপতি, বাকৃবি ছাত্রশিবির

এ বিষয়ে বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনীতি করি। আমাদের কাজটা হলো উনার বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। আমরা এটা মিছিল–মিটিংয়ের মাধ্যমে না করে ভালো কাজের মাধ্যমে করার চেষ্টা করি। তবে আমরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কোনো কিছু করিনি। গরমের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের পানি খাওয়ানোর উদ্দেশ্য থেকেই এই উদ্যোগ নেওয়া।’

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাকৃবি শাখার সভাপতি ফাজায়েল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা দাওয়াতি কার্যক্রম করেছি। কোনো শোডাউন, মৌন মিছিল বা দলীয় নামে ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনো কিছু বিতরণ করিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে ১ নম্বর গেট এলাকায় খেজুর বিতরণ করেছিলাম। ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি দেয়াললিখন করা হয়েছে, কিন্তু বাকৃবি শাখায় এমন কিছু লেখা হয়নি।’

এ বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। পরে তাঁকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবদুল আলীম বলেন, ‘ছাত্রদলের পানির বোতল বা কলমগুলো আমরা যাচাই করে দেখিনি, এটি আমাদের ভুল হয়েছে। শিবিরের কার্যক্রমের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা একদমই অবগত নই।’