মামলার খরচ নিয়ে চিন্তায় পরিবার, পুলিশের হস্তক্ষেপে অবশেষে থানায়

ভোলার দৌলতখানে কলেজছাত্র খুন হওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে আবু আবদুল্লাহ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। শনিবার পৌরসভার সদর রোডে
ছবি: সংগৃহীত

ভোলার দৌলতখান উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত কলেজছাত্রের পরিবার ঘটনার দুই দিন পরও মামলা করার আগ্রহ দেখায়নি। এ অবস্থায় পুলিশ শনিবার নিহতের পরিবারকে বুঝিয়ে থানায় নিয়ে যায়। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি। পরিবারের সদস্যরা বলেন, তাঁরা গরিব মানুষ। মামলার খরচ চালাবেন কীভাবে? এ জন্য তাঁরা মামলা করতে চাননি।

নিহত কিশোরের নাম মো. রাব্বী (১৭)। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দৌলতখান পৌরসভার সোনালী ব্যাংক-সংলগ্ন এলাকায় তাকে মারধর করা হয়। শুক্রবার সকালে ঢাকায় নেওয়ার পথে সদর উপজেলার ইলিশা এলাকায় তার মৃত্যু হয়। রাব্বী দৌলতখান পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার জেলে মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে। সে বাংলাবাজার ফাতেমা খানম মহাবিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিল।

শনিবার বেলা দুইটার দিকে রাব্বীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লাশের গোসল হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে পুলিশ লাশ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। বেলা তিনটায় ভোলার দৌলতখান পৌরসভার দক্ষিণ মাথায় রাব্বীর জানাজা হয়।

এর আগে ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অপারেশন) মো. আছাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রিপন চন্দ্র সরকার, দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সত্যরঞ্জন খাসকেলসহ পুলিশের একটি দল রাব্বীর বাড়িতে যায়। তারা অনেক বুঝিয়ে নিহতের পরিবারকে মামলা করাতে রাজি করায়।

ওসি সত্যরঞ্জন খাসকেল বলেন, নিহতের পরিবার লাশের ময়নাতদন্ত এবং মামলা করতে চায়নি। অনেক বুঝিয়ে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ কারণে লাশের দাফন হতে দেরি হয়েছে।

কেন লাশের ময়নাতদন্ত ও মামলা করতে চাননি? জানতে চাইলে নিহত রাব্বীর বাবা জামাল মাঝি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘মামলা করলে বিচার হবে, দোষীদের শাস্তি অইবো—তা বলতে পারবেন?’

নিহত মো. রাব্বী (১৭)

স্বজনেরা বলেন, রাব্বীর বাবা জামাল উদ্দিন ভাঙনের কবলে পড়ে সহায়-সম্পত্তি হারিয়েছেন। তাঁর চার সন্তান। নিজের বাড়িঘর বলতে কিছু নেই। অন্যের ছোট একটি ঘরে ভাড়া থাকেন। ঠিকমতো ভাড়া দিতে পারেন না। কয়েক মাসের ভাড়া বাকি। রাব্বী সবার বড় ছেলে। সে কলেজের ক্লাস বাদ দিয়ে জেলে নৌকায় বাবুর্চির কাজ করে। জামাল উদ্দিন ও রাব্বী নৌকায় কাজ করে কোনোরকম সংসার চালাচ্ছেন। ছোট দুই ভাই-বোন পড়াশোনা করছে। মামলা করলে তো টাকার অভাবে তাঁরা মামলা চালাতেই পারবেন না। তাই তাঁরা মামলা করার কথা ভাবেননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আছাদুজ্জামান বলেন, তাঁরা তদন্ত চালাচ্ছেন। বিভিন্ন দিক থেকে নানা রকম তথ্য পেয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করা হবে। একই সঙ্গে কিশোর গ্যাং উৎখাতে যা করতে হয় করবেন। দুপুরে নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাতের মধ্যে মামলা হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

দৌলতখানে কিশোর গ্যাংয়ের উৎখাত, রাব্বী হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে ভোলার দৌলতখান আবু আবদুল্লাহ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শনিবার বিকেল পাঁচটায় সদর রোডে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভটি কলেজের সামনে থেকে শুরু হয়ে উত্তরে থানার সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় বক্তব্য দেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম, সাগর, রানজু প্রমুখ। বক্তারা বলেন, নিহত রাব্বী এ কলেজের শিক্ষার্থী নয়। তবে রাব্বীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁরা সবাই উদ্বিগ্ন। দৌলতখানে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। শহরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় পৌঁছে গেছে, যা গোটা পরিস্থিতিকে ভয়ানক করে তুলেছে।