রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে হু হু করে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদীভাঙন। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসহ ভাঙনঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলার চার গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার। আতঙ্কে দিন পার করছে এসব এলাকার বাসিন্দারা। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ নানা স্থাপনা ঝুঁকিতে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) গোয়ালন্দ কার্যালয়ের গেজরিডার সালমা খাতুন জানান, দুই দিন ধরে পদ্মার পানি বাড়ছে। তবে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বর্তমান পানির লেভেল ৬ দশমিক ৬৩ মিটার।
বুধবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৩ নম্বর ফেরিঘাট থেকে শুরু করে ৭ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত এক কিলোমিটারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ৩ ও ৪ নম্বর এবং ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটের মধ্যের স্থানে ভাঙন বেশি। এ কারণে সব কটি ফেরিঘাট হুমকিতে রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ায় সাতটির মধ্যে ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল রয়েছে। বাকি ১, ২ ও ৫ নম্বর ঘাট কয়েক বছর ধরে ভাঙনের কারণে বন্ধ রয়েছে। এবার যে ভাঙন শুরু হয়েছে, এতে সব কটি ফেরিঘাট ভাঙনঝুঁকিতে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ছাত্তার মেম্বার পাড়া ও চাঁদখান পাড়ায় ভাঙন বেশি হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে সেখানকার পরিবার। ভাঙন অনেকের বাড়ি পর্যন্ত এসে ঠেকেছে। লঞ্চঘাটের উজানে নোহারী মণ্ডল পাড়ায়ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
ছাত্তার মেম্বার পাড়ার আতর আলী খাঁ বলেন, ‘কুশাহাটায় বাড়ি, জমিঘর ছিল। ২৪ বছর আগে সব ভাইঙ্গা গেলে অন্যত্র বাড়ি করি। দুই বছর পর ভাঙলে ছাত্তার মেম্বার পাড়ায় অন্যের জমি লিজ নিয়ে থাকি। আবার ভাঙলে কহনে যাব? উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপিরা যে টাকা কামাই করে, ইচ্ছা করলে নিজেদের টাকা দিয়ে কাজ করতে পারে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, এমপি এসে শুধু ঘুরে যায়, কাজ হয় না।’
দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মণ্ডল বলেন, ফেরিঘাট, চাঁদ খানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসাতুল সাবি-ইল হাসানসহ বাজার ও চার গ্রামের কয়েক শ পরিবার ভাঙনঝুঁকিতে বাস করছে। ভাঙন ঠেকানো নিয়ে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত তাঁরা। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। যেকোনো সময় তাঁরা আন্দোলনে নামবেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সী বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল ঢল্লাপাড়া গ্রামে। কয়েক বছর আগে আমাদের গ্রামটি নদীতে বিলীন হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএকে অনুরোধ করেছি ৭ নম্বর ঘাট থেকে ফেরি সরিয়ে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করতে।’
ইউএনও জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে চারটি গ্রামের প্রায় এক হাজার পরিবার। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত নদী শাসনের কাজ করার অনুরোধ করেছেন। ভাঙন অব্যাহত থাকলে এবং দ্রুত কাজ না হলে অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।