ঢাকায় ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের আগে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতা–কর্মীকে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। গত তিন দিনে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ২৬ নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের সাতটি থানা এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়।
পুলিশ বলছে, নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তারা বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করছে এবং তা চলমান থাকবে। জেলা বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, শনিবারের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে পুলিশ নেতা–কর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। যাঁদের বাড়িতে পাওয়া যাচ্ছে, তাঁদের ধরে এনে পুরোনো গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে।
জেলা বিএনপির গণমাধ্যম শাখার তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিনে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৪৬ নেতা–কর্মীকে পুলিশ পুরোনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার ১৫ জন, সোমবার ৪ জন ও মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়ে।
গত তিন দিনে গ্রেপ্তার নেতা–কর্মীদের মধ্যে আছেন আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খোরশেদ মোল্লা, সহসভাপতি মো. সিদ্দিক, উপজেলা বিএনপির সদস্য সামসুল হক, ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন যুবদলের নেতা মুকুল ইসলাম, জেলা শ্রমিক দলের নেতা কামাল হোসেন, মহানগর বিএনপির নেতা রাসেদ আহম্মেদ ওরফে টিটু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহপ্রচার সম্পাদক মো. খোকন, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাব্বি প্রধান, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক দুলাল হোসেন, মো. সোহেল, ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের নেতা কাউছার আহমেদ, ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা মো. মাসুদ, ১০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা শফিকুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার অন্য নেতাদের মধ্যে আছেন সোনারগাঁ পৌর বিএনপির সদস্য মো. হুমায়ুন, রিপন সিকদার; সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ইউনূস আলী; ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম, সাবেক দপ্তর সম্পাদক বোরহান উদ্দিন; কাশীপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তাইজুল ইসলাম; ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন; ফতুল্লা থানা যুবদলের নেতা দেলোয়ার হোসেন; সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য শেখ জামাল; গোদনাইল ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. ইব্রাহিম খলিল; রূপগঞ্জ সদর উনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মো. জালাল উদ্দিন; গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবদলের নেতা মো. ফারুক ও রূপগঞ্জ থানা জাসাসের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সাত্তার চৌধুরী। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের সবাইকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতা–কর্মীদের দেদার গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুকের। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘পুলিশ দলীয় কর্মীর মতো কাজ করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহাসমাবেশে না আসতে হুমকি দিচ্ছে। আর পুলিশ যাচ্ছে নেতাদের বাড়ি বাড়ি। আমাদের নেতা–কর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
তবে বিএনপির এমন দাবি অস্বীকার করেছে পুলিশ। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাউকে গ্রেপ্তারের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা বলেন, ‘এটা আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। পুরোনো মামলাগুলোর পলাতক আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। এই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবেই চলবে।’