সংঘাতময় সময়ে রংপুরে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা খুব একটা বের হচ্ছেন না। রংপুর নগরের সুরভি উদ্যানে
সংঘাতময় সময়ে রংপুরে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা খুব একটা বের হচ্ছেন না। রংপুর নগরের সুরভি উদ্যানে

সংঘাতময় সময়ে রংপুরে কমেছে প্রাতর্ভ্রমণকারী

রংপুরের প্রধান সড়ক প্রাতর্ভ্রমণকারীদের হাঁটাচলায় গমগম করত, পরিবেশ হয়ে উঠত অন্য রকম। সেই অবস্থা অনেকটাই পাল্টে গেছে। কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘাতময় অবস্থা এবং পরবর্তী সময়ে কারফিউর প্রভাব প্রাতর্ভ্রমণকারীদের মধ্যেও পড়েছে। কমে গেছে মানুষের হাঁটাচলাও।

গতকাল সোমবার সকালে নগরের সুরভি উদ্যানে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় শহরের মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা আলম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি জানালেন, সকালে শহরের প্রধান সড়কে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের পদচারণায় মুখর থাকত। বিভিন্ন পাড়ামহল্লার লোকজন হাঁটাচলা করতে বেরিয়ে পড়তেন। তাঁদেরও দেখা যাচ্ছে না। জিলা স্কুলের মাঠে দৌড়ঝাঁপ করতেও দেখা যেত, সেটিও চোখে পড়ছে না। ভোরের মুক্ত বাতাসে যাঁরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়তেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তাঁদের হাঁটাচলাও কমে গেছে।

সুরভি উদ্যানের সামনে একটি ছোট টেবিল ও একটি চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন রংপুরের গঙ্গাচড়ার বাসিন্দা রোকনুজ্জামান (২৮)। তাঁর গলায় ঝুলছিল উচ্চ রক্তচাপ মাপার যন্ত্র স্টেথেসকোপ, সামনে ছিল ডায়াবেটিস পরীক্ষার ডিজিটাল যন্ত্র। সেই সঙ্গে টেবিলের পাশে শরীরের ওজন মাপার একটি যন্ত্রও ছিল।

রোকনুজ্জামানের পরিবারে আছে মা-বাবা, স্ত্রী ও এক মেয়ে। তিনি জানালেন, প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই প্রায় ১২ কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসেন রংপুর নগরে। সকাল ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা নগরের বিভিন্ন স্থানে পথের ধারে বসেন। এ সময় বিভিন্ন বয়সের নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ প্রাতর্ভ্রমণে বের হন। মানুষের শরীরের জরুরি তিনটি চেকআপ সব সময় করার প্রয়োজন হয় বলে ভোরের এই সময়টা কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করেন তিনি। দু–তিন বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন। আগে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ জন সেবা নিতেন। শহরের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লোকজনের হাঁটাচলা কমে যাওয়ায় এখন চার থেকে পাঁচজন মানুষও পাওয়া যায় না।

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শহরের লালকুঠি মোড়ে কথা হয় দুজন প্রাতর্ভ্রমণকারীর সঙ্গে। তাঁরা দুজনই অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী। তাঁদের একজন শহরের ইসলামবাগ এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এই তো কয়েক দিন আগেও আমরা সকালে অনেকেই হাঁটতাম। কিন্তু শহরের পরিস্থিতির কারণে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না অনেকেই।’

শহরের সুরভি উদ্যানের ভেতর প্রাতর্ভ্রমণকারীদের সংখ্যাও কমে গেছে বলে উদ্যান থেকে বাইরের ফটকে আসা লোকজন জানান। মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলী বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে প্রতিদিন এই উদ্যানে কমপক্ষে ৫০ জন হাঁটাচলা করতাম, এখন পাঁচ–ছয়জনও হয় না। এই কয়েক দিনে শহরের পরিবেশের কারণে মানুষের মনে খুব একটা স্বস্তি নেই। তাই হাঁটাচলার লোকজন কমে গেছে।’