বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে দুই বছর আগে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। মামলায় পঙ্কজ নাথ ছাড়াও তাঁর ছোট ভাই যুগ্ম সচিব সরোজ নাথ, মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরসহ ১৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। পঙ্কজ নাথ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মেহেন্দীগঞ্জ পৌর বিএনপির সদস্যসচিব রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বাদী হয়ে শুক্রবার বিকেলে মেহেন্দীগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ১৬৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ জনকে নামে এবং ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলায় বাদী রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে আসামিরা ককটেল, ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁর (রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী) ওপর হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় তিনি দৌড়ে প্রাণ বাঁচালেও তাঁর পাতারহাট বন্দরের চৌধুরী মার্কেটের অফিসে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে প্রায় ১৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়। তিনি বলেন, এত দিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল এবং পঙ্কজ নাথ এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন। তাই ওই ঘটনায় মামলা করার সুযোগ ছিল না। এ জন্য আওয়ামী লীগ সরকার পতন হওয়ার পর এই মামলা করেন।
মামলায় পঙ্কজ নাথ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আছেন মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহাজান ওরফে সোহেল মোল্লা, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবি আবদুল্লাহ ওরফে দোলন, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির জমাদ্দার প্রমুখ।
মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিনুল হক বলেন, বিএনপি নেতার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্যসহ নামধারী ৪৫ জন ও অজ্ঞাতনামা ১২০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মামলার কোনো আসামি গ্রেপ্তার নেই। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ নাথ ২০১৪ সালে বরিশাল-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য হন। এরপর ২০১৮ সালে দলের মনোনয়ন নিয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। ফলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্বের মামলায় শাম্মীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে পঙ্কজ নাথ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই আবার সংসদ সদস্য হন। নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকায় ও সারা দেশে আলোচিত ছিলেন তিনি।
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ হারান পঙ্কজ নাথ। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে দলের সব স্তরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ গত বছরের ১৯ অক্টোবর দলের প্রয়াত এক নেতাকে নিয়ে বিষোদ্গার করে আলোচনায় এসেছিলেন এই সাবেক সংসদ সদস্য।