টানা ছুটিতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। শারদীয় দুর্গাপূজা ও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে পাওয়া ছুটিতে ইতিমধ্যে শ্রীমঙ্গলের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ খালি নেই। আগামীকাল রোববারেরও প্রায় ৭০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
ছুটিতে সব সময় পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে শ্রীমঙ্গলে। সবুজের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পুরো মৌলভীবাজার ঘুরতে পর্যটকেরা শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাত যাপন করে থাকেন। এখানে পর্যটকদের জন্য আছে সারি সারি চা–বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, চা জাদুঘর, বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাকালুকি হাওর, হাম্মাম ঝরনা, হাইল হাওর, মৎস্য অভয়াশ্রম বাইক্কা বিল, চা–কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি ৭১, ভাড়াউড়া লেক, ব্রিটিশদের সমাধিস্থল ডিনস্টন সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী পল্লি, সুপ্রাচীন নির্মাই শিববাড়িসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান।
ফরিদপুর থেকে আসা শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি অনেক আগেই এখানে এসেছিলাম। আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা চা–বাগান দেখতে চেয়েছিল। এবার পুরো পরিবার নিয়ে চলে এসেছি। শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন চা–বাগান ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়াচ্ছি। সবুজের মাঝে খুবই ভালো লাগছে। চা–বাগানের ভেতরে পরিবারের সবার সঙ্গে আনন্দ করছি।’
তানিম খান নামের এক তরুণ বলেন, ‘আমি সমুদ্র দেখতে বেশি ভালোবাসি। তবে এবার সমুদ্র ছেড়ে সবুজের প্রেমে পড়েছি। এই প্রথম চা–বাগানে আসলাম। চা–গাছ ছুঁয়ে দেখলাম। বেশ ভালো লাগছে। আসলে একেক জায়গার সৌন্দর্য একেক ধরনের। চা–বাগান যে এত ভালো লাগবে, না আসলে বুঝতাম না।’
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মৌলভীবাজারে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যেকোনো লম্বা ছুটিতে জেলায় প্রচুর পর্যটক আসেন। আর পর্যটকদের বড় অংশ রাতযাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন। সেখানে ছোট–বড় অনেক হোটেল-রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। পর্যটকেরা এসব হোটেল-রিসোর্টে থেকেই মূলত পুরো জেলায় ঘুরে বেড়ান।
সামছুল হক আরও বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজার দশমীর ছুটির পরের দিন অনেকেই ঐচ্ছিক ছুটি নেন। এরপর শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি এবং রোববার ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)–এর ছুটি। এসব ছুটি মিলিয়ে চার দিন ধরে শ্রীমঙ্গলে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। গতকাল ও আজ শ্রীমঙ্গলের বেশির ভাগ হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ খালি নেই। আগামীকালের প্রায় ৭০ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে আছে। শীতের সিজনে যদি এভাবে পর্যটক আসেন, তাহলে করোনা ও বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, গত ১০ বছর পর্যটন নগরী হিসেবে শ্রীমঙ্গলে যে উন্নয়ন করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা সব সময় শ্রীমঙ্গলের উন্নয়নের গল্প শোনান। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন কম। এখনো শ্রীমঙ্গলের অনেক রাস্তাঘাট ভাঙা এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন হচ্ছে না। পর্যটন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা এগিয়ে এলে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য আরও বাড়ত।