কিশোরগঞ্জে আধা বেলা হরতাল ঘোষণা দেওয়ার পর ভৈরবের বিএনপির পাঁচ নেতাকে আজ রোববার ভোরে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন পৌর বিএনপির সভাপতি শাহিন মিয়া, সহসভাপতি জিল্লুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, উপজেলা যুবদলের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন।
এই পাঁচ নেতা গতকাল শনিবার অজ্ঞাত স্থানে বসে হরতাল ঘোষণা করেন। এ ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ঘোষণার আট ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁরা গ্রেপ্তার হলেন।
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলামের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
দলীয় সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের খবর জানার পর থেকে বেশির ভাগ দলীয় নেতারা মুঠোফোন বন্ধ রাখছেন। আবার যাঁদের ফোন খোলা আছে, তাঁরা ধরছেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দলটির কর্মী সমর্থকেরা নীরব হয়ে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এখন গণমাধ্যমে কথা বলা মানে মামলা ও গ্রেপ্তার হওয়াকে স্বাগত জানানো। গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ নেতা যদি হরতালের ঘোষণা না দিতেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের একসঙ্গে দেখা না যেত, তাহলে হয়তো এত দ্রুত গ্রেপ্তার হতেন না। এ উপলব্ধি এখন সবার। এ জন্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছেন কেউ কেউ।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, ওই পাঁচ নেতাকে পুলিশের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমসহ দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ কিশোরগঞ্জে আধা বেলা হরতাল পালন করছে দলটি।
বিএনপির নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতালের সমর্থনে আজ সকালে শহরের বড় বাজার এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সরকারের বিপক্ষে ও জেলা বিএনপির সভাপতিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।
এদিকে আজ সকাল থেকে কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়ক ও মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। ভোর থেকে জেলা শহরের গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তা ছাড়া মহাসড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করতেও তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ছোট যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায় ও জেলা বিএনপির সভাপতিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কিশোরগঞ্জে অবরোধের পাশাপাশি সর্বাত্মক আধা বেলা হরতাল পালিত হচ্ছে। সকাল ছয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত এ হরতালে জনসমর্থন রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
হরতালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মহাসড়কে টহলের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থায় আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলার কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ বলেন, মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা আছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় তাঁরা সতর্ক আছেন।
আজ সকাল থেকে ভৈরব ও কুলিয়ারচরে কোথাও হরতালের সমর্থনে পিকেটিং বা মিছিল হয়নি। তবে বিএনপি না থাকলেও মাঠে সরব আছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে ভৈরবে ভোর থেকে আওয়ামী লীগ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের স্থানীয় বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে শান্তি সমাবেশ করছে।
আজ সকালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে দেখা যায়, যাত্রীবাহী বাসের চলাচল কম। তবে অন্যান্য যানবাহন বাধাহীনভাবে চলছে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মহাসড়কে অবস্থান করছে।
পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ বলেন, ‘আর জ্বালাও পোড়াও করতে দেওয়া হবে না। রাজপথ এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি আজ হরতাল ডেকে মাঠে নেই। থাকতেও দেওয়া হবে না। বিএনপির সব ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করা হবে।’