‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্প' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে
‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্প' শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।  আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে

জলাবদ্ধতা নিয়ে সভা

‘অতীতে উন্নয়নের বয়ান দেখেছি, এখন আর সংস্কারের বয়ান দেখতে চাই না’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেছেন, ‘অতীতে আমরা উন্নয়নের বয়ান দেখেছি, এখন আমরা সংস্কারের বয়ান দেখতে চাই না। আমরা চাই সংস্কারের বাস্তবায়ন।’

আজ সোমবার বিকেলে এক মতবিনিময় সভায় সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্প’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বেলা আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে এই সভা শুরু হয়।

সভায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তাঁরা জলাবদ্ধতা নিরসনের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

সভায় উপাচার্য বলেন, ‘কোনো সমস্যাই অসমাধানযোগ্য নয়। চট্টগ্রামের সমস্যা বিদেশি বিশেষজ্ঞরা সমাধান করে দেবে, এই বক্তব্যের চেয়ে আমি এখানকার বিশেষজ্ঞদের গুরুত্ব বেশি দেব। যেখানকার সমস্যা সেখানকার মানুষই এটি সমাধান করতে পারে। এই কথা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।’

সভায় যা উঠে এল

মতবিনিময় সভায় চারটি আলোচ্যসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এগুলো হলো ১. নগরের জলাবদ্ধতায় পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূতত্ত্বের প্রভাব। ২. জলাবদ্ধতায় কারিগরি ও প্রকৌশল সংক্রান্ত বিষয়। ৩. জলাবদ্ধতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ৪. জলাবদ্ধতার শাসন, নীতি বাস্তবায়ন ও জনসচেতনতা। এই চার বিষয়ের ওপর বক্তারা আলোচনা করেন। সেখানেই তাঁরা বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় বিষয় চিহ্নিত করেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ছাত্রছাত্রী নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুব মোরশেদ, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের অধ্যাপক মো. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান খান, বন্দরের চিফ হাইড্রোগাফার কমান্ডার মোহাম্মদ শামসিত তাবরীজ, চট্টগ্রাম ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ রেজাউল আহসান চৌধুরী, চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবু তাহের সিদ্দিকী প্রমুখ।

সভায় অধ্যাপক মাহবুব মোরশেদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসন করতে গিয়ে চট্টগ্রামের যে বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক অবস্থান, এটিকে অবহেলা করা হয়েছে। ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখব ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তান আমলে জলাবদ্ধতার কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ সেই সময়ে জলাবদ্ধতাকে কোনো সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতার পরে আমাদের এই সমস্যা প্রকট হয়েছে।’

জলাবদ্ধতার মূল কারণ উল্লেখ করে মাহবুব মোরশেদ বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১২০টির বেশি পাহাড় সম্পূর্ণ কাটা হয়েছে। এই পাহাড়গুলো ছিল বালুকাময় (স্যান্ডি)। এগুলো বৃষ্টির জল ধরে রাখত। আবার জলাধারও ভরাট হয়েছে। চট্টগ্রামের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কতটুকু বেড়েছে, এই তথ্যও এখন পর্যন্ত বের করা যায়নি। এসব সমস্যা সমাধানে পাহাড় কাটা বন্ধ করা, পাহাড় ধসে যেন নালা বন্ধ না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার ডিজিটাল ড্রেনিং ম্যাপ তৈরি করতে হবে।

ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান চৌধুরী বলেন, নালা পরিষ্কারে সিটি করপোরেশনের যে লোকবল আর যান্ত্রিক সক্ষমতা; সেটি যথেষ্ট নয়। ব্রিটিশরা দুই শ বছর আগে পাহাড় রক্ষা করে সিআরবিতে ভবন নির্মাণ করেছিল, এভাবে এখন আর হচ্ছে না।

অধ্যাপক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মোট কনটেইনার বিন রয়েছে ৮৩টি। একেকটা কনটেইনার বিনের মধ্যে ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে। আমি যদি এক কিলোমিটার হেঁটেও বর্জ্য ফেলতে যাই আরও অন্তত ৮৪টি কনটেইনার বিন লাগবে। আর যদি উন্নত বিশ্বের মতো প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ মিটার দূরে বিন স্থাপন করা হয়, তাহলেও অন্তত দেড় হাজার বিন প্রয়োজন।’

নালা–নর্দমা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার সরঞ্জাম সিটি করপোরেশনের নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, ভাসমান ফাঁদ দিয়ে খাল থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করতে হবে। খালের পাশে বিন স্থাপন করতে হবে। জনগণকে সচেতন করতে হবে।