ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় কলেজের মাঠে ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশ হওয়ায় পাশাপাশি অবস্থিত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সমাবেশে উচ্চ শব্দে মাইক ও ঢাকঢোল বাজানোতে অতিষ্ঠ হয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে পাঠদান করেছেন শিক্ষকেরা।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নে চম্পকনগর উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কলেজ, চম্পকনগর মডেল উচ্চবিদ্যালয় ও ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবহৃত মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়ভাবে মাঠটি চম্পকনগর কলেজ মাঠ নামে পরিচিত।
এলাকাবাসী, তিন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চম্পকনগর কলেজ মাঠে ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে সমাবেশে যোগ দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। সমাবেশে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তিন প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, কর্মী সমাবেশের জন্য সারাক্ষণ উচ্চ শব্দে মাইক বাজানো হয়। অনুষ্ঠানস্থলে ঢাকঢোল বাজানোর জন্য তিন–চারটি দল ছিল। সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় দেড়টা পর্যন্ত চলে উচ্চ শব্দে মাইক ও ঢাকঢোল। মাইক ও ঢাকঢোলের উচ্চ শব্দের কারণে দরজা লাগিয়ে পাঠদান করেন শিক্ষকেরা। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা মোটরসাইকেল নিয়ে আসায় মাইকের পাশাপাশি হর্নের শব্দও ছিল।
চম্পকনগর মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী বলে, কর্মী সমাবেশের জন্য বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত উচ্চ শব্দ, স্লোগান, বক্তব্য ও ঢাকঢোল বাজানো হয়। এর মধ্যে মনোযোগ ধরে রেখে ক্লাস করা কঠিন।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, কর্মী সমাবেশের কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদান কিছুটা ঢিলেঢালা অবস্থায় ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফটক লাগানো ছিল। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করছিল। আর কলেজে একাদশ শ্রেণির ভর্তির কার্যক্রম চললেও তেমন একটা ক্লাস হয়নি। কলেজে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিও তেমন ছিল না।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কোন দিকে মঞ্চ করবেন বিষয়টি জানাননি। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা দুঃখ প্রকাশ করছেন। কারণ, কর্মী সমাবেশ বন্ধের দিনে বা অন্য কোনো জায়গায় করা যেত। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয়, বিষয়টি তিনি খেয়াল রাখবেন।
ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিল্লুর রহমান দস্তগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠ থেকে ৩০০ গজ দূরে আমার বিদ্যালয়। আজ বিদ্যালয়ে ৩৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মাইক বাজছিল। পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটেনি।’
চম্পকনগর উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল সাত্তার সরকারের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল করা হলে কাল কলেজে আসার কথা বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। এরপর একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
চম্পকনগর মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও ফতেহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোহাম্মদ সেলিম চৌধুরী বলেন, ‘মাঠটি তিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। বেশির ভাগ জায়গা কলেজের। কর্মী সমাবেশের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না জানি না। আধা ঘণ্টা মাইক চালানো হয়েছিল।’ পাঠদানে কোনো সমস্যা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকেরা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। মাঠে মাইক ও হাজার হাজার মানুষ থাকলে তো আর ক্লাস করা যায় না। যখন জানতে পেরেছি, তখন কিছুই করার ছিল না।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বলেছিল কলেজ ও স্কুল বন্ধ। স্কুল ও কলেজ খোলার বিষয়টি আমি জানতাম না। বিষয়টির জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। কারণ, আমি নিজেও দুটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্বে আছি। এ ধরনের সমাবেশ পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটায়, আমি জানি।’