সংগঠনের গঠনতন্ত্র না মেনে অছাত্র ও বিবাহিত ব্যক্তিদের নিয়ে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সদ্য ঘোষিত এই কমিটি বাতিলের দাবিতে আজ সোমবার নগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সংগঠনের পদবঞ্চিত একটি অংশের নেতা-কর্মীরা।
আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী। জাহিদ ফারুক বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। অপর দিকে আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া সবাই বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী।
মহানগর ছাত্রলীগের ৩২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদনের কথা জানিয়ে গত শনিবার রাতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় তাঁর ফেসবুক পেজে তালিকা প্রকাশ করেন। সংগঠনের প্যাডে তিন মাসের জন্য করা ওই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির অনুমোদন দিয়ে সই করেছেন সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। কমিটিতে রইজ আহমেদ ওরফে মান্নাকে আহ্বায়ক এবং মো. মাইনুল ইসলাম ও আরিফুর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তা বাতিলের দাবিতে আজ বেলা ১১টার দিকে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সদর রোডে সোহেল চত্বর এবং পাশের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে বের হওয়া বিক্ষোভ মিছিল নগরীর সদর রোড, কাকলী মোড়, সার্কিট হাউস সড়ক, রাজাবাহাদুর সড়ক হয়ে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে যায়। সেখানে সমাবেশ করে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃত্ব পাওয়া ছাত্রলীগের বিবাহিত নেতা ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের ছবিসংবলিত পোস্টার, প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, তথাকথিত ওই আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশের ছাত্রত্ব নেই। আহ্বায়ক রইজ আহমেদ বিবাহিত এবং তাঁর সন্তান রয়েছে। দুই যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান ওরফে শাকিল ও মাইনুল ইসলামও বিবাহিত। এ ধরনের কমিটির ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান বরিশালের বাসিন্দা হওয়ায় মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সুপারিশ অনুযায়ী তিনি কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
মহানগর ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে আমার নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ যা ভালো মনে করছেন, তা–ই করছেন। টেন্ডারবাজ ও শিক্ষকদের মারধর করা ব্যক্তিদের নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি করলে সম্ভবত আপনারা খুশি হতেন।মাইনুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক, বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগ
নতুন কমিটির আহ্বায়ক বরিশাল বাস মালিক সমিতির সদস্য এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এমনকি চাকরি করছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনে। চলতি মাসে গঠিত বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের আইনবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই নেই। এসএসসি পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী তাঁর বয়স ৩২ বছর।
বক্তারা বলেন, তালিকার ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মাইনুল ইসলাম এক বছর আগে বিয়ে করেছেন। এসএসসির সনদ অনুযায়ী তাঁর বর্তমান বয়স ৩০ বছর। আর ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুর রহমান বিয়ে করেছেন চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি। তাঁর বয়সও ৩০–এর কাছাকাছি।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর-গ-এ বলা আছে, কোনো নিয়মিত শিক্ষার্থী (৫-এর-ক উপধারা অনুযায়ী) ছাত্রলীগের কর্মকর্তা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হতে পারেন। বিবাহিত, ব্যবসায়ী ও চাকরিতে নিয়োজিত ছাত্রছাত্রী ছাত্রলীগের কর্মকর্তা হতে পারবেন না।
সমাবেশে বক্তব্য দেন রেজানুর রহমান, জুবায়ের আহমেদ, বেল্লাল হোসেন, মো. জিতু, মো. রাব্বি, তৌহিদুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, এমরান হাওলাদার, রুবেল হোসেন, আরিফুর রহমান, লিয়াকত হোসেন, মেহেদি মিরাজ, ফাহাদ হোসেন, মো. ইব্রাহিম, প্রিন্স সরদার, মেহেদি হাসান প্রমুখ।
এদিকে নতুন কমিটির নেতারা আজ সকালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যান বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগের বিষয়ে আহ্বায়ক রইজ আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
তবে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া মাইনুল ইসলাম বলেন, মহানগর ছাত্রলীগে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিয়েছে। এই কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে কিছু নেতা-কর্মী অন্তত পরিচয় বহন করতে পারবেন। তিনি বিবাহিত কি না, তা মূল বিষয় নয় উল্লেখ করে মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে আমার নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ যা ভালো মনে করছেন, তা–ই করছেন। টেন্ডারবাজ ও শিক্ষকদের মারধর করা ব্যক্তিদের নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি করলে সম্ভবত আপনারা খুশি হতেন।’
সংগঠন সূত্র জানায়, দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজের অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ মে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসীম উদ্দিনকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।