আশপাশের অন্তত ৫০টি গ্রাম থেকে এখানে কবুতর এনে বিক্রি করা হয়। এগুলোর দাম ৩০০ থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কবুতরের কোনোটির ডানার ওপর অনিন্দ্য সুন্দর পালক। কোনোটির পাখার সৌন্দর্য অপরূপ। কোনোটির চোখ অতি সুন্দর। কোনোটির মাথার সৌন্দর্য অদ্ভুত সুন্দর। কোনোটির সুরেলা আওয়াজে মুগ্ধ ক্রেতা-বিক্রেতারা। কুমিল্লা শহরতলির বলরামপুর দিদার মার্কেট এলাকার কবুতরের হাটের দৃশ্য এটি।
দিদার মার্কেট সড়কের দুই ধারে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার দুপুর থেকে বিকেলের মধ্যে গেলেই চোখে পড়বে শত শত কবুতর। এলাকাবাসীর কাছে এটি এখন কবুতরের হাট নামে পরিচিতি। আশপাশের অন্তত ৫০টি গ্রাম থেকে এখানে কবুতর এনে বিক্রি করা হয়।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, দিদার মার্কেটে বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর ওঠে। এর মধ্যে রয়েছে ফেন্সি কবুতর, গিরিবাজ কবুতর, পাংখি কবুতর, পাক টেডি, ব্লুবার রেসার, ব্লুচেকার রেসার, লাল গররা, চুইনা, কাগজি, লোটন, কালোমুক্কি, হলুদ মুক্কি, বাঁশিরাজ কোকা, কালো সিরাজী, লাল সিরাজী, হলুদ সিরাজী ব্লুবাজ লেজ লাহোরী, লাল বোম্বাই, হলুদ বোম্বাই, সাদা কিং, কালো কিং, লাল কিং, হলুদ কিং, সাদা লক্ষা, কালো লক্ষা, হলুদ লক্ষা, ময়ূরপক্ষী সাদা জ্যাকোবিন, ফ্যানটেল, হলুদ সর্টফেস, বুখারা, আর্চ অ্যাঞ্জেল, ফ্রিলবাক, আউল, কালো ম্যাগপাই, সাদা পটার, ব্লু পটার, সাদা বাগদাদি হোমা, ইংলিশ ক্যারিবিয়ান হোম, ব্লু স্ট্রেচার, করমুনা, রোলার, শেখর, হেলমেট, জার্মান ও কাগাজিল। এগুলোর দাম ৩০০ থেকে ১৪ হাজার টাকা।
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বড়দৈল গ্রামের আবদুল কাদের সিলভার সিরাজী ও লাহোরী সিরাজী প্রজাতি ও রেসার প্রজাতির কবুতর আনেন। জোড়া হাঁকিয়েছেন দুই হাজার টাকা করে। আবদুল কাদের বলেন, তাঁর বয়স এখন ৫৮ বছর। ৪০ বছর বয়স থেকে তিনি কবুতর পালন ও বিক্রি করছেন।
কুমিল্লা নগরের কাপ্তানবাজার থেকে কবুতর বিক্রি করতে এসেছেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গিরিবাজ কবুতর এক জোড়া বিক্রি করেছি ১ হাজার ১৫০ টাকায়।’
নগরের ধর্মসাগরপাড়ের নাহার ভিলার বাসিন্দা নাসির উদ্দিন প্রথমবারের মতো এই কবুতরের হাটে আসেন। তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা শহরতলিতে এত বড় কবুতরের হাট তিনি আর কখনো দেখেননি। একসঙ্গে এত কবুতর কোথাও বিকিকিনি হতে দেখিনি।’
এদিকে কবুতর হাটকে কেন্দ্র করে বলরামপুর দিদার মার্কেটে গড়ে উঠেছে কয়েকটি পাখির দোকান। এতে কবুতরের সংখ্যাই বেশি। মদিনা বার্ড সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মঈন উদ্দিন বলেন, এক জোড়া কিং কবুতরের দাম ২ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। মানুষ প্রথমে শখের বশে নেন। পরে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পালন করেন। এরপর বিক্রি করেন।
মঈন উদ্দিন আরও বলেন, ‘আগে এক জোড়া কবুতর ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। এখন সেই কবুতরের জোড়া ১৪ হাজার টাকা।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, প্রতি শুক্রবারে এখানে ক্রেতা-বিক্রেতার গমগম করে। তাঁদের বেশির ভাগই তরুণ।
আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে শৌখিন ক্রেতা থেকে নানা ধরনের ক্রেতা আসেন। নানা ধরনের কবুতর এখানে ওঠে। দেখতে অপরূপ লাগে। মায়াময় লাগে।’