ঢাকার কেরানীগঞ্জে ব্যবসায়ী পরিবারের পৈতৃক জমি দখল করতে না পেরে সাবেক এক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মদদে আওয়ামী লীগ এবং হকার্স লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ইউনিয়নের দেওশুর এলাকায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন সোহেল ও মো. নাসিরউদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। চাঁদা না পেয়ে তাঁদের জমি বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করে কথিত ‘সোনার বাংলা গ্রিন সিটি’ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে আবাসন ব্যবসা গড়ে তোলেন ওই মন্ত্রীর লোকজন।
সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন সোহেল বলেন, ‘পাঁচ দশক আগে আমার বাবা মরহুম সাহেদ আলী ওরফে শাহু ব্যাপারী আমার চার বোন, দুই ভাই ও মায়ের নামে ভিন্ন ভিন্ন রেজিস্ট্রি করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন ব্রাহ্মণকিত্তা মৌজায় ৬৬৯ শতাংশ জমি কেনেন। পরে ওই জমির নিরাপত্তায় চারদিকে পাকা সীমানাদেয়াল নির্মাণ করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও ঢাকা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামের মদদে আওয়ামী হকার্স লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও কালিন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন ও তাঁর ভাই মো. সুমন, মো. সুজন ও মো. রাসেল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আনোয়ারের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা আমাদের জমিতে সোনার বাংলা গ্রিন সিটি নামক অবৈধ আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড স্থাপন করেন।’ এ সময় আমরা প্রতিবাদ করলে আনোয়ার চক্র আমাদের বলেন, ‘আমাদের কাছে জমি বেচবি, নয়তো পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দিবি। আমরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাদের হত্যা ও গুমের হুমকি দেওয়া হয়। ভূমিদস্যুদের কবল থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা গত ১ এপ্রিল ঢাকা জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করি। বিষয়টি জানতে পেরে আনোয়ার ও তাঁর তিন ভাই সুমন, সুজন ও রাসেল আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরে আমরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৫ এপ্রিল কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।’
সালাউদ্দিন সোহেল আরও বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় থাকায় আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাইনি। একইভাবে আনোয়ার চক্র আমাদের আশপাশে থাকা নিরীহ মানুষ ও কৃষকের শত শত বিঘা জমি দখল করে ভরাট করেছেন। এরপর সেখানে তাঁরা অবৈধভাবে প্লট তৈরি করে সোনার বাংলা গ্রিন সিটি নামক আবাসন ব্যবসায়ের বিজ্ঞাপন দিয়ে ও সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জমি বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের এই অন্যায় কর্মকাণ্ডের কেউ প্রতিবাদ করলে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে উল্টো তাদের নানাভাবে জমির নিরীহ মালিকদের হয়রানি করে যাচ্ছে। সরকার পতনের পর আনোয়ার ও তার তিন ভাই গা ঢাকা দিয়েছে।’
সালাউদ্দিনের বড় ভাই মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, ‘এখন দেশে নিরপেক্ষ সরকার রয়েছে। তাই আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। আশা করছি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আমাদের বৈধ জমি উদ্ধারে আমাদের সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া যেসব আওয়ামী লীগ নেতা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কলা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আনোয়ারসহ তাঁর তিন ভাই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গা ঢাকা দিয়েছেন।