সিলেট সিটি নির্বাচনের পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও নতুন করে এখন লোডশেডিং শুরু হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। নগরবাসী বলছেন, নির্বাচনের আগে নগরে কোনো লোডশেডিং ছিল না। এখন নির্বাচনের পরই লোডশেডিং ফিরেছে। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
এর আগে খুলনাতেও সিটি নির্বাচনের আগে লোডশেডিং ছিল না। কিন্তু ১২ জুন নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপরই লোডশেডিং ফিরে তার আগের রূপে। এবার সিলেটেও একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটল।
তবে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় সারা দেশেই লোডশেডিং করতে হচ্ছে। সিলেটও দেশের বাইরে নয়। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে, সেই অনুযায়ী গ্রাহকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।
সিলেটে লোডশেডিং কমাতে গত ১৮ এপ্রিল বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে ফোন দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামানা চৌধুরী। ওই দিন সিলেট বিউবোর এক সভায় যোগ দিয়ে তিনি প্রতিমন্ত্রীকে ফোন করে সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার অনুরোধ করেছিলেন। এর পর থেকে সিলেটে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহ স্বাভাবিক হয় বলে জানান বিউবোর একাধিক কর্মকর্তা।
নির্বাচনের আগে সর্বশেষ ৮ জুন নগরে বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগান ঠিক আছে বলে জানিয়েছিলেন বিউবো সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তারা। এর আগে ১৫ মে তাঁরা বলেছিলেন, চাহিদা ও সরবরাহের ফারাক তেমন নেই। এ জন্য লোডশেডিং নেই। সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় বিউবো বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। আর গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিদ্যুৎ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। আবার গ্রামাঞ্চলের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিউবো।
নগরের বারুতখানা এলাকার ব্যবসায়ী সাব্বির আলম বলেন, আজ সকাল থেকে একাধিকবার লোডশেডিং হয়েছে। গত মাসে এমনটি হয়নি। ওই এলাকায় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে লোডশেডিং শুরু হওয়ার পর সাড়ে চারটার দিকে বিদ্যুৎ এসেছে। এখন ঘণ্টাব্যাপী লোডশেডিং হলেও নির্বাচনের আগে ৫ থেকে ১০ মিনিট লোডশেডিং হতো বলে তিনি জানান।
জিন্দাবাজার এলাকার ব্যবসায়ী রিয়াদ আহমদ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিপণিবিতানে লোডশেডিং চলছে। যদিও গত মাসে এমনটি হয়নি। নির্বাচনের পরপরই এমন অবস্থায় অনেকে অনেক কিছু মন্তব্য করছেন।
বিউবো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ গ্রাহকের জন্য আজ দুপুর ১২টার দিকে চাহিদা ছিল ১৭১ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। সেখানে সরবরাহ ছিল ১১৩ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৫৮ মেগাওয়াট। সিটি করপোরেশন এলাকার আড়াই লাখ গ্রাহকের চাহিদা প্রায় ১২৫ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ আছে ৭৬ মেগাওয়াট। এ ছাড়া বিভাগে পল্লী বিদ্যুতের অধীনে প্রায় ২০ লাখ গ্রাহকের চাহিদা ২৮৪ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে ২০২ মেগাওয়াট। ঘাটতি ৮২ মেগাওয়াট। যদিও ১৪ জুন রাত ৯টার হিসাবে, বিভাগে বিউবোর বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩৮ দশমিক ১ মেগাওয়াট। সেখানে সরবরাহও একই পরিমাণ ছিল। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের চাহিদা ছিল ১৯৭ মেগাওয়াট। সেই অনুযায়ী সরবরাহ ছিল স্বাভাবিক।
বিউবো সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ অঞ্চল-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম বলেন, তাঁর অধীনে থাকা এলাকায় গ্রাহক আছেন প্রায় ৭২ হাজার। আজ গ্রাহকদের চাহিদা ছিল ৩০ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ প্রায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাচ্ছেন তিনি। বিউবো সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ অঞ্চল-২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ-ই-আরেফিন বলেন, আজ বিকেল ৪টায় সাড়ে ৬৫ হাজার গ্রাহকের চাহিদা ছিল ২৮ দশমিক ২ মেগাওয়াট। সেখানে তিনি ১৪ দশমিক ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছেন।
বিউবো সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। দেশের কয়েকটি উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় সরবরাহে এমন সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। নির্বাচনের পর লোডশেডিং হওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।’