বিএনপির নেতা-কর্মীদের কারও হাতে-পায়ে কোপের চিহ্ন, কারও সারা শরীরে জখম

নোয়াখালীতে পদযাত্রা কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে কুমিল্লার লাকসামে হামলায় আহত উত্তর জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাছির উদ্দিন ভূঁইয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শনিবার নগরের রেসকোর্স এলাকার একটি হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

নোয়াখালীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে কুমিল্লার লাকসামে হামলার শিকার বিএনপির আট নেতা-কর্মী হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। তাঁদের কারও হাতে-পায়ে কোপের চিহ্ন। কারও কপালে, সারা শরীরে জখমের চিহ্ন। আকস্মিক এ হামলার কথা মনে পড়লে এখনো ভয়ে কুঁকড়ে উঠছেন তাঁরা।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে নোয়াখালীতে বিএনপির মহাসচিবের পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে লাকসাম জংশন বাসস্ট্যান্ড ও বাইপাস এলাকায় গাড়িবহরের হামলা, ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের কুপিয়ে জখম করা হয়। এতে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। এর মধ্যে ওই আট নেতা-কর্মী কুমিল্লার রেসকোর্স আখন্দ জেনারেল হাসপাতালের ২১৩ থেকে ২১৬ নম্বর কক্ষে চিকিৎসাধীন। তাঁরা সবাই কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদের অনুসারী।

আজ শনিবার বেলা তিনটায় হাসপাতালে গিয়ে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়। মুরাদনগর উপজেলার আলীরচর গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী দেলোয়ার হোসেন বলেন, তাঁকে রড দিয়ে পেটানো হয়। ওই খবর শুনে তাঁর বাবা গতকাল মারা গেছেন বলে দাবি তাঁর। আজ সকালে জানাজা পড়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ছাত্রদল কর্মী শরীফুল ইসলাম ঘটনার পর ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁর ডান পা ও বাঁ হাতে জখমের চিহ্ন দেখা গেছে। কুমিল্লা উত্তর জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নাছির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ডান হাত ও বাঁ পায়ে কোপ মারে। হামলার সময় অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন অংশ নেয়। ওরা আমাদের তিনটি বাসে তল্লাশি করে। কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই আকস্মিক রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটায় এবং দা ও চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কোপ মারে।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির এক কর্মী

পায়ে ব্যান্ডেজ দেখিয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাইফুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ‘আমার ডান পায়ে রড দিয়ে পেটানো হয়েছে।’ নবীপুর পশ্চিম ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা বলেন, ‘আমার মাথায় রড দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।’

উপজেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক বশিরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘বাঁ হাত, হাঁটুতে আঘাত করা হয়েছে আমাকে।’ উপজেলা যুবদলের সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে কোপ দিছে ডান পায়ে। পুরো পিঠে ও হাতে রডের পিটুনির চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছি।’

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মুজিবুল হক জানান, মুরাদনগর থেকে ৩টি বাস ও ৪০টি মাইক্রোবাসে করে তাঁরা নোয়াখালীর উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। বেলা সোয়া একটার দিকে লাকসাম জংশন বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে প্রথমে মোটরসাইকেল দিয়ে তাঁদের বাসের গতিরোধ করা হয়। এরপর ২৫ থেকে ৩৫ বছরের কিছু যুবক কোনো কারণ ছাড়াই তাঁদের ওপর দা, চায়নিজ কুড়াল ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটানো শুরু করে। তাদের আচরণে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁরা বাস থেকে নেমে একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তাঁদের ওপর আবার হামলা করা হয়। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী হামলার শিকার হন।

মুজিবুল হক আরও বলেন, ‘আমাদের নেতা কামাল হোসেনের পিঠে কোপ মেরেছে। সেটি দেবে গেছে। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। পশ্চিম নবীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ঢাকায় চিকিৎসাধীন। একই ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিনও ঢাকায় চিকিৎসাধীন।’

লাকসামে আওয়ামী লীগের হামলায় আহত বিএনপির এক প্রবাসী কর্মী

লাকসাম জংশন এলাকার অন্তত তিনজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ওই এলাকায় জড়ো হন। এরপর বাসে-মাইক্রোবাসে তল্লাশি করা হয়। এটা দেখে বাস থেকে কিছু লোক নেমে বিএনপির পক্ষে স্লোগান দেয়। তাদের দৌড়ানি দিয়ে মারধর শুরু করে সরকারি দলের লোকজন।

হামলার ঘটনায় আজ সংবাদ সম্মেলন করেছে লাকসাম উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ। বেলা তিনটায় পৌর এলাকার হাউজিং এস্টেটে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউনুছ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ঘটনার দিন বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্র নিয়ে লাকসাম বাইপাস এলাকায় নেমে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর হামলা করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাঁরা খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার নামের স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে জনসাধারণের ধাওয়ায় তাঁরা কয়েকজন আহত হতে পারেন। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। লাকসামে আওয়ামী লীগ কারও ওপর হামলা করেনি।

জানতে চাইলে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মাহফুজ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ করেনি।