বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ফ্যাসিবাদের রূপকার খুনি শেখ হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি। পালিয়ে গিয়েও খুনি হাসিনা দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। এরই মধ্যে আমরা খবর পেয়েছি, কুমিল্লার পার্শ্ববর্তী সীমান্ত ত্রিপুরায় ফ্যাসিবাদের গংরা জমায়েত হওয়ার অপচেষ্টা করছেন। আমরা ফ্যাসিবাদের গংদের স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, তাদের ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা কখনোই বাংলার মাটিতে সফল হবে না। ফ্যাসিবাদের দালাল যারা রয়েছে—ছাত্রলীগ, যুবলীগ, টোকাই লীগ, বাংলাদেশের কোথাও পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করলে তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হওয়ার ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হতে দেওয়া হবে না।’
আজ শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হল মাঠে মশাল মিছিলের শুরুতে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। ‘কুমিল্লার মাটি ব্যবহার করে ফ্যাসিবাদী শক্তির একত্র হওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার সমাবেশ ও মশাল মিছিল’ নামের এই কর্মসূচির আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা। টাউন হল মাঠ থেকে শুরু হওয়া মশাল মিছিলটি নগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজগঞ্জ এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় প্রয়োজনে কুমিল্লা থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা জানেন, বিগত সময় কুমিল্লার মানুষ খুনি বাহারের (সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার) ত্রাসের রাজত্বে ভয়ের মধ্যে ছিলেন। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে হাসপাতাল, এমনকি রাস্তার ফুটপাতের ব্যবসায়ীদেরও বাহার বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়েছে। বাহার গংরা কুমিল্লার মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। কুমিল্লাবাসী বাহারসহ ফ্যাসিবাদব্যবস্থাকেই বিলুপ্ত করেছে। এখনো তারা ষড়যন্ত্র করছে, কিন্তু তাদের কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া হবে না।’
সমাবেশে কেন্দ্রীয় আরেক সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘কুমিল্লার মাটিতে খুনি হাসিনা ও বাহারের কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না। ভারতে বসে বাহার ও তাঁর কন্যা সূচনা এখনো ষড়যন্ত্র করছেন। আমি তাঁদের হুংকার দিয়ে বলতে চাই, শুধু কুমিল্লা কেন, বাংলার মাটিতে কোথাও তাঁদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’
সমাবেশ ও মশাল মিছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আবু রায়হান, সাকিব হোসাইনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী জানান, আজ সন্ধ্যায় ভাষা সাহিত্য চর্চা একাডেমি নোয়াখালীর আয়োজনে ‘নজরুল সাহিত্যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায়ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘কুমিল্লার একটি অংশে নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতারা মিটিং করার জন্য একত্র হচ্ছেন এবং ভারতের আগরতলায় তাঁরা একটি সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই সমাবেশ থেকে তাঁরা একটি প্রবাসী সরকারের ঘোষণা দিতে চায় এবং শেখ হাসিনা সেখানে নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।’
নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আফাজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এ সময় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল, ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজের সহকারী অধ্যাপক মিজান বিন মজিদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে চব্বিশের আন্দোলনে নিহতদের জন্য দোয়া করা হয় এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আর্থিক অনুদানের টাকা তুলে দেন অতিথিরা।