রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ শিক্ষকসহ ৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভা শেষে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. শওকত আলী এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
অভিযুক্ত দুই শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক আসাদুজ্জামান মণ্ডল ও গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান। আসাদুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া অভিযুক্তের তালিকায় সাত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ৭২ শিক্ষার্থী আছেন। এই শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ সদ্য নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সদস্য। অভিযুক্ত দুই শিক্ষক পলাতক।
উপাচার্য শওকত আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিগগির মামলা করা হবে।
উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নৈতিক শৃঙ্খলার তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে লেজুড়বৃত্তি রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট সভায় হয়েছে। তাই কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি-অনিয়মের ঘটনায় একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।
গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদ। তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। এতে কোটা সংস্কার আন্দোলন আরও জোরদার হয়।
আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি করে তৎকালীন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু ওই কমিটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল না।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক শওকত আলী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। জুলাই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমানকে সদস্যসচিব ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আমির শরীফকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তের এক মাস পর আজ এ সিদ্ধান্ত জানানো হলো।