উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ফাঁকা। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে জটলা থেকে দৌড়ে এসে কেন্দ্রের বাইরের মাঠে অবস্থান নেন কয়েকজন। আজ সকাল দশটার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ঘোড়ামরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ছিল ফাঁকা। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে জটলা থেকে দৌড়ে এসে কেন্দ্রের বাইরের মাঠে অবস্থান নেন কয়েকজন। আজ সকাল দশটার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ঘোড়ামরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে

‘সাংবাদিক আসছে, তোরা লাইন ধর’

সকাল ১০টা। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কেন্দ্রের বাইরে জটলা। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে জটলা থেকে একজন বলে ওঠেন, ‘সাংবাদিক আসছে, তোরা লাইন ধর।’

কেন্দ্রের বাইরে ভোটারের উপস্থিতি বেশি দেখানোর চেষ্টা করছিলেন যে তরুণেরা, তাঁরা তখন এক এক করে কেন্দ্রে ঢুকতে থাকেন। দ্বিতল ভবনবিশিষ্ট কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে দেখা গেছে, ১০টি বুথের একটিতেও ভোটার নেই। নিচতলায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহবুব আলম বসেছিলেন। এ সময় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ বলে ওঠেন, ‘মেম্বার সাহেব বসে আছেন কেন? চলে যান।’

কেন্দ্রের ভেতরে অবস্থান করছেন কেন, জানতে চাইলে মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কেন্দ্রপ্রধান। তাই তিনি কেন্দ্রে এসেছেন। তাঁর কাছে নির্বাচন কমিশনের কোনো অনুমতিপত্র আছে কি না,  জানতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। পরে তিনি বলেন, তিনি ভোট দিতে এসেছিলেন। ভোট দিয়ে বসার বেঞ্চ পেয়ে একটু বসেন। তিনি চলে যাচ্ছেন বলে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সালাম প্রথম আলোকে জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ১০২টি। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ১৩৮ জন। সে হিসাবে ভোট পড়েছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, কিছুক্ষণ আগে থেকে কিছু অবাঞ্ছিত মানুষের জটলার খবর শুনে সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে জটলা ভেঙে দেন। এখন পর্যন্ত তাঁর কেন্দ্রে কোনো রকমের প্রভাব বিস্তার হয়নি। সীতাকুণ্ডে ভোর থেকে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছিল। সকালে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেও ভোট শুরুর সময় সকাল আটটা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল।

সকাল সাড়ে নয়টায় আরআর টেক্সটাইল মিল উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে নারী ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি। সেখানে ইউপি সদস্য মো. শাহাব উদ্দিনকে নারী বুথের বাইরে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে প্রভাব বিস্তার করতে দেখা গেছে।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোসলেহ উদ্দিন এ সময় ইউপি সদস্য মো. শাহাব উদ্দিনকে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। চলে যাবেন বললেও তাঁকে বের হতে দেখা যায়নি।

শাহাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য। নারীদের বুথ খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছে বিধায় তিনি তাঁদের সহযোগিতা করছেন। তবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁকে বের হয়ে যেতে বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন। ওই কেন্দ্রে সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৬০টি। মোট ভোটার ৪ হাজার ৯৬৭ জন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মোসলেহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রে কোনো ধরনের অভিযোগ এখন পর্যন্ত আসেনি। সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার বাড়তে শুরু করেছে।

সকাল নয়টায় উত্তর মছজিদ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ১ নম্বর নারী বুথে একটি ভোটও পড়েনি। পাশের তিনটি বুথে কোনো ভোটার ছিল না। তখন ওই কেন্দ্রে তিনজন ভোটারকে ভোট দিতে আসতে দেখা গেছে। এক ঘণ্টার ব্যবধানে সেখানে ভোট পড়েছে মাত্র ২৩টি। ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ২৯ জন।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হেফাজতুর রহমান সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে সম্ভবত ভোটার উপস্থিতি কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো ভোটার বাড়তে পারে।

তিনটি কেন্দ্রের দুটিতে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আরিফুল আলম রাজুর এজেন্ট ছাড়া অন্য প্রার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জুর এজেন্ট দেখা যায়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো ধরনের গোলযোগের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।