চারদিকে সবুজের সমারোহ। গাছগাছালির অপরূপ মিতালি। এর মাঝখানে আস-সালাম জামে মসজিদ। মসজিদের ছাদ সমতলভাবে করা হয়নি। কয়েকটি ধাপে করা হয়েছে। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। ছাদ দিয়ে মসজিদের ভেতর থেকে গরম বাতাস ওপরে উঠে যায়। পর্যাপ্ত ঠান্ডা বাতাস ভেতরে ঢোকে। এতে পুরো মসজিদটি সব সময় ঠান্ডা থাকে। মসজিদে কোনো জানালা নেই। তবু ভেতরে আলো-হাওয়ার কমতি নেই। প্রকৃতির মাঝে, খোলা জমিনে বসে ইবাদতের অনুভূতি পান মুসল্লিরা। কিন্তু বৃষ্টিতে ভেজা কিংবা রোদের তাপে দগ্ধ হওয়ার বালাই নেই।
লক্ষ্মীপুর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কেল্লা এলাকায় আধুনিক স্থাপত্যে গড়ে তোলা হয়েছে এই মসজিদ। কেবল মসজিদের অনুপম স্থাপত্যশৈলী দেখতেই প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন এখানে। কোনো জানালা নেই মসজিদের। তবু বৈদ্যুতিক বাতি ছাড়াই মসজিদটি দিনের বেলায় আলোকিত থাকে।
গরমের সময় মসজিদকে শীতল করার জন্য রয়েছে চারটি জলাধার। জলাধারগুলোতে রাখা শীতল পাথর গ্রীষ্মকালে মসজিদকে ঠান্ডা রাখে। দোতলা এ মসজিদটির নিচতলা দুই ভাগে বিভক্ত। সামনে মেহরাব ও মসজিদের মূল অংশ। এর পেছনে মাঝবরাবর গলিপথ। তার দুই পাশে শীতল জলাধার। মুসল্লিদের জন্য ভেতরে একটি প্রশান্তিময় স্থান তৈরি করতে মসজিদে নরম প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। পেছনের অংশে আছে বড় গ্যালারি। যেখানে বসে মুসল্লিরা নিজ মনে ইবাদত করতে পারেন। গ্যালারি অংশের পেছন থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। দোতলায় রয়েছে নারীদের নামাজ পড়ার জায়গা। নজরকাড়া নকশায় নির্মিত এ মসজিদটি দেশের অন্যতম সুন্দর মসজিদ বলে স্বীকৃতি পেয়েছে ইতিমধ্যে। স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের স্থপতি নবী নেওয়াজ খান ও তাঁর দল মসজিদটির নকশা করেছেন।
নির্মাতাদের সূত্রে জানা যায়, বিরতিহীন কাজের পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এ মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়। ১০ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দোতলা এ মসজিদ নির্মাণে সব খরচ জুগিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। তবে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। এমনকি নিজের নাম প্রকাশেও তিনি অনিচ্ছুক। তবে তিনি রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত। সেই প্রতিষ্ঠানের অধীনে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে বলে জানান তিনি। বর্তমানে প্রতিদিন দৃষ্টিনন্দন মসজিদটিতে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়তে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, কমলনগর উপজেলাসহ নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসছেন সহস্রাধিক মুসল্লি। বিশেষ করে শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করতে আড়াই-তিন হাজার মুসল্লির সমাগম ঘটে।
মসজিদের ইমাম মো. ওমর ফারুকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, মসজিদের ভেতরে, নিচে ও দোতলায় দুই হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদ চালুর প্রথম জুমায় মাত্র দুই সারি মুসল্লি নিয়ে জামাত করতে হয়েছে। তবে এখন জুমায় মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়। ভেতরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রাস্তা দাঁড়িয়েও নামাজ আদায় করছেন মুসল্লিরা। প্রতিষ্ঠাতা এ মসজিদের প্রচারণা করতে চান না। কিন্তু মুসল্লিদের মুখে মুখে মসজিদটির নাম ছড়িয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান শমীন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, মসজিদটির ছাদ প্রচলিত অন্য স্থাপনার মতো নয়। প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতেই মসজিদটির এমন নকশা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা আছে বলে এখানে এসিসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার তেমন নেই। ইবাদত করতে আসা মানুষজন সহজেই গভীর প্রশান্তিতে ডুবে যান।