রংপুরের তারাগঞ্জ

‘বুড়া হইনো, সেতু পাইনো না’

জেলেপাড়া খেয়াঘাট দিয়ে ১৫টি গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। সেতু নির্মিত না হওয়ায় তাঁরা ভোগান্তিতে রয়েছেন।

সাইকেল কাঁধে নিয়ে লোকজন যমুনেশ্বরী নদী পার হচ্ছেন। গতকাল তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের জেলাপাড়া খেয়াঘটে
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ও কুর্শা ইউনিয়নকে পৃথক করেছে যমুনেশ্বরী নদী। এ নদীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাট হলো জেলেপাড়া খেয়াঘাট। এ খেয়াঘাট দিয়ে দুই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এখানে সেতু নির্মিত হয়নি। ফলে বর্ষাকালে নৌকা ও কলার ভেলায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের জেলেপাড়া খেয়াঘাটের অবস্থান। স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খেয়াঘাটের দুই পারের জেলেপাড়া, সায়তনতলা, তেলিপাড়া, সরকারপাড়া, চিলবিলপাড়া, পঞ্চায়েতপাড়া, খিয়ারপাড়া, হরিপাড়া, মাছুয়াপাড়া, ঝাকুয়াপাড়া, খানসাহেবেরপাড়া, হাজিপাড়া, নদীর পাড়, দোলাপাড়া, মণ্ডলপাড়া, পাতাইপাড়াসহ ১৫টি গ্রামের ২০ হাজারেও বেশি মানুষের বসবাস। এ খেয়াঘাট দিয়ে তাঁরা চলাচল করেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সেতু না হওয়ায় তাঁরা দুর্ভোগে পড়েছেন।

গতকাল রোববার গিয়ে দেখা যায়, হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের জেলেপাড়া খেয়া ঘাটে পানি কম, হাঁটুসমান পানি। নৌকা ও কলার ভেলা চলাচল বন্ধ। লোকজন সাইকেল, মালামাল কাঁধে নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছেন। ঘাটের চারদিকে জমেছে কচুরিপানা।

ঘাট পারাপারের সময় কথা হয় জেলেপাড়া গ্রামের হরিদাস চন্দ্রের (৭০) সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘নদী পার হয়া মণ্ডলপাড়া দিয়া তারাগঞ্জ অল্পে আনা রাস্তা। ওই জন্যে এদি হামার যাওয়া আইসা। কিন্তুক এটে সেতু না হওয়ায় হামাক ঘারোত করি মালামাল উবি নিগার নাগোছে। এটে সেতু বানাইলে কী হয়?’

নদী পার হয়া মণ্ডলপাড়া দিয়া তারাগঞ্জ অল্পে আনা রাস্তা। কিন্তুক এটে সেতু না হওয়ায় হামাক ঘারোত করি মালামাল উবি নিগার নাগোছে।
হরিদাস চন্দ্র, জেলেপাড়া গ্রামের বাসিন্দা

হরিদাসের কথা শেষ না হতেই ক্ষুদ্ধ হয়ে নিপিন চন্দ্র (৬৫) বলেন, ‘চেংরা থাকি বুড়া হইনো, এটে সেতু পাইনো না। সেই দেশ স্বাধীনের পর থাকি শুনি সেতু হইবে। কত নেতা, এমপি, চেয়ারম্যান কথা দিছে সেতু হইবে। হামরা খালি সেই কথা শুনি দিন পার করোছি। দ্যাশোত কত জাগাত কোটি কোটি টাকা দিয়া সেতু বানাওছে। হামার এটে আসি টাকা শ্যাষ হওছে নাকি। মইরার আগোত কি এটে সেতু দেখির পামো না হামরা।’

মণ্ডলপাড়া গ্রামের আবদুল হক বলেন, নদীর ওপারে তীরঘেঁষা ইকরচালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এপারের অনেক শিশু লেখাপড়া করে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমে আসায় শিক্ষার্থীরা হেঁটে পার হয়। কিন্তু বর্ষাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। খুব দ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা দরকার। শুধু শিক্ষার্থী নয়, এখানে সেতু হলে আশেপাশের ১৫টি গ্রামের মানুষ এর সুফল পাবে।

জেলেপাড়া খেয়াঘাটের কথা জানা আছে। খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে বরাদ্দের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
প্রদীপ চন্দ্র সরকার, উপজেলা প্রকৌশলী

নদীর পাড় গ্রামের কৃষক আবু বক্কর বলেন, নদীর ওপারে অনেক জমিজমা। আবাদি ফসল ঘরে তুলতে অনেক কষ্ট হয়। খরচও বাড়ে। এখানে সেতু হলে অনেক টাকা সাশ্রয় হতো।

ইকরচালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খগেন্দ্র নাথ রায় বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ভালো থাকলেও বর্ষা মৌসুমে নদী ওপারের অনেক শিক্ষার্থীকে অভিভাবকেরা বিদ্যালয়ে পাঠান না। তাই সে সময় তুলনামূলক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম হয়।

হাড়িয়ার কুঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুমারেশ রায় বলেন, জেলেপাড়া খেয়াঘাটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৫টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ওই খেয়াঘাট পার হয়ে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। এ ছাড়া দুই পারের মানুষ ফসল পারাপারেও দুর্ভোগে পড়েন। এখানে সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় একাধিকবার বলেছি। খুব দ্রুত এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা দরকার।

উপজেলা প্রকৌশলী প্রদীপ চন্দ্র সরকার বলেন, জেলেপাড়া খেয়াঘাটের কথা জানা আছে। ওই খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে বরাদ্দের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেখানে সেতু তৈরি করা হবে।