এসব পুরোনো বাসে করেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচল করছেন যাত্রীরা। এতে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায়
এসব পুরোনো বাসে করেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচল করছেন যাত্রীরা। এতে যাত্রীরা  ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায়

ঢাকা–মানিকগঞ্জ সড়কপথ

বাসসেবায় যাত্রীরা অসন্তুষ্ট 

গণপরিবহনের নাজুক অবস্থার জন্য জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়ী করছেন যাত্রীরা। উন্নত বাস নামানোর দাবি।

ঢাকা–মানিকগঞ্জ পথে চলাচলকারী বাসগুলোতে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। তাঁরা বলছেন, কয়েকটি পরিবহনের বাসের কাছে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। পুরোনো এসব বাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। সিটিং সার্ভিস বললেও যেখানে–সেখানে বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে।

ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জের দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। বাসমালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাবতলী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক হয়ে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীবাহী কয়েকটি পরিবহনের বাস চলাচল করে। এসব বাসের এক-তৃতীয়াংশই মেরামতের জন্য পড়ে থাকে, বাকি দুই ভাগ বাসে যাত্রী পরিবহন করা হয়। অধিকাংশ বাস পুরোনো ও লক্কড়ঝক্কড়। অনেক বাসের ফিটনেসও নেই।

সুজন জেলা কমিটির সহসভাপতি ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মতো প্রবীণ ব্যক্তিদের ভোগান্তি আরও বেশি। বাসের হেলপাররা পায়ে ধরে গাড়িতে ওঠায়, ঘাড় ধরে নামিয়ে দেয়। এখানে পরিবহনসেবার মান নেই বললেই চলে। যাত্রীদের জিম্মি করে রেখেছেন পরিবহনের মালিকেরা। এ রুটে (ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক) বাসগুলো সিটিং সার্ভিস হলেও নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে ৮-১০টি স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা করে। এ ছাড়া ঘন ঘন আসন হওয়ায় যাত্রীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। ভাড়াও বেশি।’

মানিকগঞ্জ শহর থেকে ঢাকায় যাত্রীদের যাতায়াতে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এসি লিংক পরিবহনের ১০টি বাস নামানো হয়। তবে বাসমালিকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে দুই বছর পর এসব বাস বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সরকারি সংস্থা বিআরটিসির বাসও বন্ধ সাত বছর ধরে।

বিআরটিসির মানিকগঞ্জের উথলী ডিপো সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে উথলী ডিপোর জন্য ঢাকা-আরিচা এবং ঢাকা-পাটুরিয়া রুটে বিআরটিসির ৪০টি নতুন দোতলা বাস দেওয়া হয়। ওই বছরের ৪ মে এসব বাস চালুর কথা থাকলেও পরিবহনমালিকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ওই সব বাস চালু করা সম্ভব হয়নি। এই রুটে বিআরটিসির ১৬টি বাস চলাচল করলেও এগুলো একেবারে লক্কড়ঝক্কড় ছিল। সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় প্রায় সাত বছর আগে বিআরটিসির এসব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে এই ডিপোর অধীনে বিআরটিসির কোনো বাস নেই।

জেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস-অটো টেম্পো ওনার্স গ্রুপের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানিকগঞ্জে নতুন বাস নামানো যায়নি। তবে বিআরটিসির বাসের জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

পরিবহনব্যবস্থার এই নাজুক পরিস্থিতির কারণে ঢাকা-মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া রেললাইন আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটিসহ স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন এই পথে রেললাইনের দাবি জানিয়ে আসছে। সংগঠনটির সদস্যসচিব বিমল রায় বলেন, ‘ঢাকার অতি কাছে হওয়ার পরও আমরা মানসম্মত পরিবহনসেবায় পিছিয়ে। রেললাইন স্থাপন করা হলে ঢাকায় যাতায়াতে শুধু মানিকগঞ্জবাসীর নয়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদেরও সুবিধা হবে।’

ব্যক্তিগত ও কলেজের কাজে মাঝেমধ্যে ঢাকায় যাতায়াত করেন জেলা শহরের বাসিন্দা ও একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ। গণপরিবহনের নাজুক অবস্থার জন্য জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়ী করে তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশে অন্যান্য জেলায় বিআরটিসির উন্নত (এসি) বাস চলাচল করে। শুধু মানিকগঞ্জেই বিআরটিসির বাস নেই। এখানে যেসব পরিবহনের বাস চলে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের ও পুরোনো। অধিকাংশ পরিবহনের বাস পাটুরিয়া ঘাট থেকে যাত্রী বোঝাই করে জেলা সদর হয়ে ঢাকায় চলাচল করে। জেলা সদরের যাত্রীদের এসব বাসে প্রায় সময়ই দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। 

বিআরটিসির উথলী ডিপোর ব্যবস্থাপক মো. নায়েব আলী প্রথম আলোকে বলেন, সামনে বিআরটিসির শীতাতপনিয়ন্ত্রিত নতুন বাস আসছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও এ বাস নামানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

জেলা প্রশাসক রেহেনা আকতার প্রথম আলোকে বলেন, উন্নত পরিবহনসেবায় এ জেলা পিছিয়ে। ১৪ মার্চ অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সভা করা হবে। কীভাবে উন্নত পরিবহনসেবা নিশ্চিত করা যায়, সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।