সিলেটে বাবাকে ফোন দিয়ে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখার কথা জানানো তরুণ উদ্ধার

ইয়ামিন আরাফাত
ছবি: সংগৃহীত

‘বাবা, আমাকে অন্ধকার একটি ঘরে আটকে রেখেছে। বলেছে এক লাখ টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেবে...’ মুঠোফোনে এমন কথা জানানো সিলেটের তরুণ ইয়ামিন আরাফাত ওরফে হামিমকে (১৯) উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকাল আটটার দিকে সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।

ইয়ামিন আরাফাত সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শ্রীরামপুর শেখপাড়া এলাকার জামাল উদ্দিনের ছেলে। গত মঙ্গলবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে মুঠোফোন বিক্রির কথা বলে কদমতলীর উদ্দেশে বের হয়েছিলেন ইয়ামিন আরাফাত। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় গত বুধবার তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন সিলেটের মোগলাবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মাঈন উদ্দিন বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে খবর পেয়ে আজ সকাল আটটার দিকে কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ইয়ামিন আরাফাত নামের নিখোঁজ তরুণকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ইয়ামিন আরাফাতের সঙ্গে কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। তাঁর চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জনা যাবে।

জামাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বর থেকে মায়ের (জামাল উদ্দিনের স্ত্রী) মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন আসে। এ সময় অপর প্রান্ত থেকে তাঁর ছেলে জানিয়েছিলেন তাঁকে চারজন মিলে আটকে রেখেছে। তাদের হাতে বড় বড় বন্দুক। ঘরে আলো-বাতাস ঢোকে না। এক দিনে মাত্র একটি বন (রুটি) খেতে দিয়েছে। সেই সঙ্গে এক লাখা টাকা তাদের দিলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন। সর্বশেষ বুধবার রাতে তাঁর সঙ্গে ছেলের কথা হয়। এরপর ফোন বন্ধ করে রাখা হয়।

ইয়ামিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শাহপরান (রহ.) সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইয়ামিন দ্বিতীয়। ইয়ামিন পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়ির পাশে একটি কম্পিউটার কম্পোজ ও মুঠোফোনে টাকা লেনদেনের দোকান চালাতেন। এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে তিনি দোকানে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সম্প্রতি তাঁর মা সালমা আক্তার অসুস্থ হলে ইয়ামিন তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন বিক্রি করার কথা জানিয়েছিলেন।

আজ সকালে ইয়ামিনদের বাড়িতে গিয়ে বেশ কয়েকজন স্বজনকে পাওয়া যায়। ইয়ামিনের চাচাতো ভাই নাহিদ আহমদ বলেন, ইয়ামিনের মা অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। তিনি কথা বলতে পারবেন না। বাড়িতে থাকা স্বজনদের মধ্যে ইয়ামিনের দূরসম্পর্কের মামা পরিচয়ে আকবর আলী বলেন, ইয়ামিনকে পাওয়া গেছে। এখন তাঁকে নিয়ে চিন্তিত তাঁরা। এর বাইরে পরিবারের কেউই আর কোনো কথা বলতে চাননি।

বাড়িতে ইয়ামিনের বাবা জামাল উদ্দিনকেও পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।