ফরিদপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার ৫৮ জনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁদের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক রয়েছেন। এ ছাড়া আদালত সদরপুরে হওয়া একটি মামলায় তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আজ রোববার দুপুরে ফরিদপুরের সদর, ভাঙ্গা ও সদরপুর আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা-পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার ২৭ জনের জামিনের আবেদন নাকচ করেন সদর আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান। তাঁদের মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী আছেন। তাঁরা হলেন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ও সদরের মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুর এলাকার শাহ মো. শের আলমের ছেলে শাহ মো. আরাফাত (২৩) এবং নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের বিলনালিয়া গ্রামের বাসিন্দা কাদের বিশ্বাসের ছেলে জনি বিশ্বাস (২০)। তাঁরা দুজন ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আরাফাতের মা ময়না বেগম বলেন, ‘সরকার ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়ার পর আমার ছেলে আর কোনো আন্দোলন করেনি। এখন কেন তাহলে আরাফাতকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে? আমার ছেলে অনার্স (স্নাতক) চতুর্থ বর্ষের লিখিত পরীক্ষা শেষ করেছে। সামনে মৌখিক পরীক্ষা। এ অবস্থায় তাকে আটকে রাখা হলে তার শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সদরপুর আদালতে সদরপুর থানা-পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার ১০ আসামি জামিন আবেদন করেন। রোববার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গৌর চন্দ্র সাহা তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করেন। পুলিশ তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত তিনজনের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই তিনজন হলেন সদরপুরের পূর্ব শ্যামপুর মহল্লার বাসিন্দা মাসুদ রানা এবং চরভদ্রাসন উপজেলার ধোপাডাঙ্গী গ্রামের রিশাদ বেগ ও সজীব বেগ। রিশাদ ও সজীব আপন ভাই।
অন্যদিকে ভাঙ্গা থানা-পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার ২১ জন জামিনের আবেদন করলে আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাছিম মাহমুদ তাঁদেরও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জসীমউদ্দিন মৃধা জানান, যাঁদের জামিন বাতিল করা হয়েছে, তাঁদের পক্ষে কাল সোমবার আবার স্ব স্ব আদালতে জামিনের আবেদন জানানো হবে।
থানা-পুলিশ জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত দায়ের হওয়া চারটি মামলার মধ্যে ফরিদপুরের কোতোয়ালি ও ভাঙ্গা থানায় একটি করে এবং সদরপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে।
বিস্ফোরক আইনের মামলায় চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলামসহ সহযোগী সংগঠনের চার নেতা-কর্মীর এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ দুপুরে চুয়াডাঙ্গা আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে পাঠানো অপর তিন আসামি হলেন জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হাকিম, চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাহেদ সিদ্দিকী ও জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এম এম শাহজাহান মুকুল বলেন, ‘মামলাটিতে এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে রোববার আদালতে হাজির করা হয় এবং তাঁদের উপস্থিতিতে এই রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।’
১৮ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক নিতীশ কুমার বাদী হয়ে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। মামলায় পরস্পর যোগসাজশে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড সম্পাদনের লক্ষ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি ও বোমাসদৃশ্য বস্তু নিজ হেফাজতে রাখা এবং সহায়তা করার অভিযোগ করা হয়।