বরিশালে তারুণ্যের সমাবেশে এ অঞ্চলের বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতি নিয়ে দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গতকাল শনিবার নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ‘তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক’ স্লোগান নিয়ে বরিশালে বিভাগীয় ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ করে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। তবে সমাবেশের মঞ্চে দেখা যায়নি বরিশাল অঞ্চলের বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের।
বরিশাল অঞ্চলে বাড়ি বিএনপির বেশ কয়েক কেন্দ্রীয় নেতার। তাঁদের মধ্যে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দীন আহম্মেদ, শাহজাহান ওমর, জয়নুল আবেদীন প্রমুখ। কিন্তু গতকালের আয়োজনে এ নেতারা কেউ উপস্থিত না থাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সমাবেশে দলের বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান ও মহানগরের আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান বক্তব্য রেখেছেন।
বরিশাল মহানগর বিএনপির বর্তমান ও সাবেক অন্তত ছয় নেতার সঙ্গে এ নিয়ে প্রথম আলোর কথা হয়। তাঁরা বলেন, বরিশালে এত বড় একটি আয়োজনে এ অঞ্চলের নেতারা মঞ্চে না থাকায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার তরুণ নেতা-কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা গেছে। এ সমাবেশে তাঁদের নিমন্ত্রণই করা হয়নি। এটা দৃষ্টিকটু লেগেছে।
আমি বরিশালেই আছি। কিন্তু সমাবেশে যোগ দেওয়ার ডাক পাইনি।মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব, বিএনপি
জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার গতকাল বরিশালেই ছিলেন। বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক এই সভাপতি বরিশালে অবস্থান করলেও তাঁকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সরোয়ারের সমর্থক নেতারা বলছেন, মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি। তিনি বরিশালের সাবেক মেয়র এবং সদর আসনের পাঁচবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। তাঁর শহরে এত বড় একটি আয়োজনে তাঁকে নিমন্ত্রণ না করাটা দুঃখজনক।
তবে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছি। এ সমাবেশ ছিল তরুণদের। তাঁরাই সব করেছেন। তরুণেরা তাঁদের দুঃখ, দুর্দশা ও স্বপ্নের কথা বলেছেন সেখানে। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এখানে দলীয় কোন্দল বা অন্য কোনো ব্যাপার নেই।’মনিরুজ্জামান খান, আহ্বায়ক, বরিশাল মহানগর বিএনপি
জানতে চাইলে মজিবর রহমান সরোয়ার গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোক বলেন, ‘আমি বরিশালেই আছি। কিন্তু সমাবেশে যোগ দেওয়ার ডাক পাইনি। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমাকে ফোন করে বলেছেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ডাকলে সমাবেশ লম্বা হবে। এ জন্য কাউকেই ডাকা হয়নি।’ এটা দলের স্থানীয় কোন্দলের কারণে হয়েছে কি না, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেটা বলতে পারব না। এটা দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার।’
তবে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছি। এ সমাবেশ ছিল তরুণদের। তাঁরাই সব করেছেন। তরুণেরা তাঁদের দুঃখ, দুর্দশা ও স্বপ্নের কথা বলেছেন সেখানে। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এখানে দলীয় কোন্দল বা অন্য কোনো ব্যাপার নেই।’
গতকালের সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানি বলেন, তরুণেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এবার সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। একই সমাবেশে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছি। এ সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।’ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন।