ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান

জোবায়েরের লাশ তুলতে দেননি স্বজনেরা

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত জোবায়ের আহমেদের (২১) লাশ তুলতে দেননি স্বজনেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহসী মাসনাদ, ডিবি পুলিশ ও গৌরীপুর থানা-পুলিশের একটি দল যায় মরদেহটি তুলতে। কিন্তু পরিবারের বাধায় লাশটি তোলা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০ জুলাই জেলার গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে জোবায়েরসহ তিন তরুণ নিহত হন। বাকি দুজন হলেন বিপ্লব হাসান (২০) ও নূরে আলম সিদ্দিকী ওরফে রাকিব (২০)। বিপ্লব চূড়ালি গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় তেলের মিলের শ্রমিক, নূরে আলম সিদ্দিকী দামগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও মাদ্রাসাশিক্ষক এবং জোবায়ের পূর্ব কাউরাট গ্রামের বাসিন্দা ও শম্ভুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। ঘটনার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তিনজনের মরদেহ দাফন করেন স্বজনেরা।

এর আগে গত বুধবার বিপ্লব ও নূরে আলমের মরদেহও তুলতে দেওয়া হয়নি।

২০ জুলাইয়ের ওই ঘটনায় গৌরীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শফিকুল আলম বাদী হয়ে ২২ জুলাই থানায় একটি মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এজাহারে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়—এমন একটি মহল অবৈধভাবে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করে। অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীদের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র অনুযায়ী বন্দুকধারী চার-পাঁচজন দুষ্কৃতকারী গুলি করে ওই তিন তরুণকে হত্যা করে।

একই ঘটনায় ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আরও দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বাদী যথাক্রমে ডৌহাখলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিম আকন্দ এবং একই ইউনিয়নের কৃষক দলের নেতা আবুল কাশেম। মামলা দুটিতে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আসামি করা হয়।

তিন তরুণকে ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করায় ৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক আসমা সুলতানা নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ তুলে ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। সেই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্তকারী সংস্থা লাশগুলোতে তুলতে তাঁদের বাড়িতে যায়।

মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতের আদেশে লাশ উত্তোলন করতে গেলেও পরিবার সম্মতি দেয়নি। এ কারণে আমাদের ফেরত আসতে হয়। বিষয়টি জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

জোবায়ের আহমেদের ছোট ভাই মো. কাউসার বলেন, লাশ উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না এই মর্মে একটি আবেদন তৈরি করে এনেছিল পুলিশ। তাঁর বাবাসহ এলাকার লোকজনের কাছ থেকে সেই কাগজে সই নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা দাবি, তা–ই কাগজে লেখা ছিল। সেখানে লেখা ছিল, যত দিন পর্যন্ত আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধসহ অন্য শহীদদের লাশের ময়নাতদন্ত না হবে, তত দিন আমাদের স্বজনদের কারও লাশ উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। যদি সব শহীদের লাশ তোলা হয়, তাহলে আমাদের স্বজনদের লাশও তুলতে দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জেলার ডিবি পুলিশের ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লাশ উত্তোলন করতে দেবে না মর্মে পরিবারগুলো লিখিত আবেদন করেছে। অন্য দুজনের বেলায় কম্পিউটারের দোকান থাকায় আবেদন দিতে পারলেও ওই এলাকায় দোকান না থাকায় জোবায়েরের বেলায় আবেদনে আমরা সহযোগিতা করেছি।’