সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক
সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক

অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

বরিশালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম থেকে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বরিশাল-৫ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, রিটার্নিং কর্মকর্তা, পুলিশ কমিশনারসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার বরিশালের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন বরিশাল জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ মশিউল আলম খান।

বিচারক হাবিবুর রহমান চৌধুরী নালিশি অভিযোগটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে বেঞ্চ সহকারী আরমান হোসেন এ তথ্য জানান।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে বরিশার-৫ (সদর) আসনের বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান প্রচার চালিয়ে স্পিডবোটে বরিশালে ফিরছিলেন। এ সময় পথে সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন এলাকায় তাঁর বোটটি অপর একটি স্পিডবোটে করে পুলিশ ধাওয়া করে আটকে দেয়। এ সময় মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে থাকা এক কর্মীকে জোর করে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। ওই ঘটনায় মামলাটি করা  হয়েছে। ওই সময় এ ঘটনার একটি ভিডিও দেশজুড়ে বেশ আলোচিত হয়েছিল।

মামলার আসামিরা হলেন সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী  জাহিদ ফারুক, সাবেক পুলিশ কমিশনার রুহুল আমিন, রিটার্নিং কর্মকর্তা তৎকালীন জেলা প্রশাসক অজিয়র রহমান, উপপুলিশ কমিশনার মোয়াজ্জেম হোসেন ভুঁইয়া, বন্দর থানার সাবেক ওসি মোস্তফা কামাল হায়দার, পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ ফয়সাল আহম্মেদ, এসআই আবদুল মালেক, এএসআই এরফান হোসেন, শহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, রাসেল মিয়া, মোহাম্মদ মিলন বিশ্বাস, মেহেদি হাসান প্রমুখ। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রচারণা থেকে জেলা যুবদলের নেতাকে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টায় মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, আসামিদের বেশির ভাগ পুলিশের ও প্রশাসনের উচ্চপদের কর্মকর্তা। তাঁরা গত আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার পাতানো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দলের মনোয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীকে বিনা ভোটে নির্বাচিত করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত হন। মামলার প্রধান আসামি জাহিদ ফারুক ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। প্রধান সাক্ষী মজিবর রহমান সরোয়ার ছিলেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী।

মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, আসামিদের বেশির ভাগ পুলিশের ও প্রশাসনের উচ্চপদের কর্মকর্তা। তাঁরা গত আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছেন।

মামলার আরজিতে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুপুরে সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন বাজারে লিফলেট বিতরণ করে বরিশাল নগরে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারসহ তাঁর সমর্থক নেতা-কর্মীরা নৌপথে স্পিডবোটে রওনা দেন। তাঁরা সদর উপজেলার বিশ্বাসের হাট নদীর পাড়ে এসে পৌঁছালে প্রধান তিন আসামির পরিকল্পনা ও হুকুমে অন্য আসামিরা পুলিশের পোশাক পরে এসে তাঁদের দুই পাশ থেকে ঘিরে ধরেন। তাঁরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। বাধা দিলে আসামিরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টেনেহিঁচড়ে যুবদল নেতা মশিউল আলম খানকে স্পিডবোট থেকে অপহরণ করেন। পরে তাঁরা একটি বদ্ধ ঘরে নিয়ে তাঁর কাছে অস্ত্র থাকার মিথ্যা স্বীকারোক্তি চান। তিনি (বাদী)  স্বীকারোক্তি দিতে না চাইলে রাইফেলের বাঁট ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যা করে লাশ গুমের আলোচনা করেন। পরে আসামিরা জানতে পারেন পুরো ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তখন তাঁকে বন্দর থানায় সোপর্দ করা হয়।

‘স্বৈরশাসন’ বহাল থাকায় নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এত দিন মামলা করেননি বলে বাদী উল্লেখ করেছেন।