সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভালো মানুষ হতে পারাটাই জীবনের বড় জয়। এ পথে বাধা আসবে, তবু থেমে যাওয়া চলবে না। বারবার চেষ্টা করে এগিয়ে যেতে হবে মূল লক্ষ্যে। নিজের পাশাপাশি ভাবতে হবে দেশ নিয়েও।
গতকাল সোমবার শিখো-প্রথম আলো আয়োজিত জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সময়ের জনপ্রিয় তারকা ও বিশিষ্টজনদের বক্তব্যে এ কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে বারবার।
চট্টগ্রাম নগরের ফয়’স লেকের কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আসা মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ উৎসব। আট বছর পর আবার শুরু হয়েছে জিপিএ-৫ উৎসব। প্রথম আলোর আয়োজনে এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখো। চট্টগ্রাম জেলার মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ বছরের আয়োজনের যাত্রা শুরু হলো। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নানা আয়োজনে উচ্ছ্বাসে মেতে ছিল প্রায় ১০ হাজার মেধাবী শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছিল আগেই। সকাল আটটায় উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশের নির্ধারিত সময় থাকলেও তার আগেই হাজির হয়ে যায় নিবন্ধিত ছাত্রছাত্রীরা। অনুষ্ঠানে ছিল দুটি পর্ব। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছিল পার্কে ঘোরাঘুরি, রাইডে চড়া, আড্ডা আর খাওয়া। এই সময়ে কেউ চরকির মাধ্যমে উড়েছিল শূন্যে, আবার কেউ বোটে চড়ে হ্রদের স্বচ্ছ জলে ভেসে বেড়িয়েছিল।
উৎসবে অংশ নিয়ে উচ্ছ্বসিত নগরের সেন্ট প্ল্যাসিডস স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মুন্না দত্ত বলে, উৎসব উপলক্ষে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হয়েছে তার। সে ঢাকার একটি কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাই সেখানেই থাকে। অন্যদিকে তার অনেক বন্ধু ভর্তি হয়েছে চট্টগ্রামের কলেজে।
চট্টগ্রাম নগর থেকে যেমন শিক্ষার্থীরা এসেছে, তেমনি উপজেলা থেকে এ উৎসবে অংশ নেয় অনেক শিক্ষার্থী। দল বেঁধে এসেছে মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া উচ্চবিদ্যালয়ের ইমরান হোসেন, তামিম উদ্দিন, অনীক দাশ, অনীক দে ও আতাউল্লাহ আবির।
জিপিএ-৫ পাওয়া দুই নাতনিকে নিয়ে এসেছিলেন গোলাম রাব্বানী। ঢাকায় থাকলেও নাতনিদের সাফল্য উদ্যাপন করতে তিনি চট্টগ্রামে ছুটে এসেছেন। একসঙ্গে হাজারো মেধাবী মুখ দেখে ভালো লাগার কথা জানান তিনি।
বেলা আড়াইটায় শুরু হয় উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে শিক্ষার্থীদের উদ্দীপনা ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য নিয়ে মঞ্চে হাজির হন অতিথিরা। শুরুতেই মঞ্চে আসেন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী মেহজাবীন চৌধুরী। শিক্ষার্থীদের ফলাফলে উচ্ছ্বসিত মেহজাবীন চৌধুরী বলেন, ‘তোমাদের জন্য গর্বিত। তোমরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।’ তিনি গেয়ে শোনান ‘বুক চিন চিন করছে হায়’ গানের কয়েকটি লাইন।
উৎসবের অন্যতম আয়োজক শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম শিখোর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা জিশান জাকারিয়া বলেন, ‘একটি ভবন কতটুকু শক্তিশালী হবে, তা বোঝা যায় এর ভিত্তিতে (ফাউন্ডেশন)। ঠিক তোমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। বড় এ পরীক্ষায় তোমরা খুবই ভালো করেছ। তবে এখানে থামলে চলবে না।’
মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিখ্যাত হওয়া সফল মানুষদের প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে অভিনেতা আরিফিন শুভ বলেন, ‘ফেল (অকৃতকার্য) করলে অসুবিধা নেই। তবে চেষ্টা বন্ধ করা যাবে না।’
আরেক তারকা সাবিলা নূর শিক্ষার্থীদের মা-বাবার পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পড়াশোনা করেই তারকা হতে হয়। যখন থেকে মা-বাবার কথা শুনেছি, তখন থেকে সব সিদ্ধান্ত সঠিক নিয়েছি।’
সাফল্যের আনন্দে ভেসে যাওয়া যাবে না, উল্লেখ করে কৃতিত্বপূর্ণ ফল করা ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে কবি ও সাংবাদিক একুশে পদকপ্রাপ্ত আবুল মোমেন বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে অনেক সময় মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায়। তবে আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার সমন্বয় সাধন করে এগিয়ে যেতে হবে।’
ভালো মানুষ হওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে, তারা এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। আর জিপিএ-৫ না পেয়েও ভালো মানুষ হওয়া যায়। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান জিপিএ-৫ পাননি। কিন্তু ভালো মানুষ হয়েছেন।
আরও বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুস্তফা কামরুল আকতার, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া খাতান, চিত্রপরিচালক রেদওয়ান রনি ও কনকর্ড গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সরকার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভার জাতীয় পর্ষদের নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে ব্যান্ড বে অব বেঙ্গল ও তীরন্দাজ।