অতিরিক্ত ভর্তি ফি, সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি বাতিলসহ তিন দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা এসব দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। দাবি মেনে নেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। মানববন্ধন কর্মসূচির পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো যৌক্তিকভাবে ভর্তি, সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি কমিয়ে শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা; পোষ্য কোটাসহ সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বাতিল করা; আগামী দুই সেমিস্টার চার মাস করে শেষ করা।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজাদ শিকদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আসাদুল্লাহ আল গালিব, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মাহবুবুল হাসান, সমাজবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ফয়সাল হোসেন প্রমুখ।
আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হওয়ার পর আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব হয়ে উঠবে। কিন্তু বারবার শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাবি নিয়ে গেলেও প্রশাসন কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর আগের প্রশাসনের চাপিয়ে দেওয়া পদ্ধতিগুলো সংস্কার করছে না।’
আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘আপনারা দ্রুত এসব ফি কমানোর ব্যবস্থা করুন। বাড়তি ফি শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম করে অর্থ নেওয়ার মতো। শিক্ষার্থীরা আপনাদের আয়ের উৎস নয়। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, অযৌক্তিক ফি বাতিল করে শিক্ষার্থীবান্ধব ফি নিশ্চিত করুন।’
উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি ছিল ৮ হাজার ১০০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এর পরের বছর আরও ২ হাজার ২৫০ টাকা বাড়িয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি নেওয়া হয় ১৭ হাজার ২৫০ টাকা। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ভর্তি ফির পাশাপাশি কয়েক গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে সেমিস্টার ফি ও ক্রেডিট ফি। ২০২২ সালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ছিল ২ হাজার ৪৩০ টাকা। সেখানে দুই বছরের ব্যবধানে ২০২৪ সালে সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৫ টাকা। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত তত্ত্বীয় প্রতি ক্রেডিটের মূল্য ছিল ১০৫ টাকা। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রতি তত্ত্বীয় ক্রেডিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪০ টাকা। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক প্রতি ক্রেডিটের মূল্য ছিল ১৬০ টাকা। সেটি যথাক্রমে বৃদ্ধি করে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, বন্যা ও জুলাই বিপ্লবে দীর্ঘ একটা সময় সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ক্যাম্পাসে কিছু বিভাগে ছয়–সাতটি ব্যাচ চলমান। বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসরুম ও ল্যাবের সংকট এখনো কাটেনি। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট নিরসনে সেমিস্টারের সময় কমিয়ে আনা জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এম সরোয়ার উদ্দিন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।