নদ খননের বালু কৃষিজমিতে ফেলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানববন্ধন

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাণীশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করে
ছবি: সংগৃহীত

মোংলা বন্দর ড্রেজিং প্রকল্পের আওতায় পশুর নদ খননের বালু খুলনার দাকোপ উপজেলার বাণীশান্তা এলাকার কৃষিজমিতে ফেলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্থানীয় কৃষকেরা মানববন্ধন ও পথসভা করেছেন। আজ বুধবার সকালে ইউনিয়নের বাণীশান্তা-ভোজনখালী বিলের ধানখেতে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাণীশান্তা ইউনিয়ন কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

মানববন্ধনে এবং পথসভায় কয়েক শ নারী ও পুরুষ কৃষক তাঁদের কৃষিজমি রক্ষার বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন হাতে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।

কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাপা নেতা রুহিন হোসেন বলেন, ‘বাণীশান্তার উর্বর তিন ফসলি কৃষিজমিতে পশুর নদ ড্রেজিংয়ের বালু ফেলার ভুল সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। যেহেতু বালু ফেলার বিকল্প আছে তাই কৃষি ও কৃষকের কল্যাণে মোংলা বন্দরকে এখানে বালু ফেলার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হবে। করোনাকাল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবারও প্রমাণ করেছে, কৃষি হচ্ছে আমাদের মায়ের মতো। তাই কৃষি ও কৃষকের ওপর আঘাত সহ্য করা হবে না। কৃষকের জীবন-জীবিকা নিয়ে তামাশা করার পরিণাম ভালো হবে না।’

পথসভায় বক্তারা বলেন, বাণীশান্তার কৃষকেরা জীবন দেবে তবু কৃষিজমিতে বালু ফেলতে দেবে না। পশুর নদের পারের বাণীশান্তা ইউনিয়নের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষিকাজ। তাঁদের সেই জীবিকা এখন হুমকির মুখে ফেলার আয়োজন চালাচ্ছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাণীশান্তার তিন ফসলি কৃষিজমি ধ্বংস করে বন্দর কর্তৃপক্ষ ড্রেজিংয়ের বালু ফেললে কৃষকেরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন। কৃষক উদ্বাস্তু হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশেরও বিপর্যয় ঘটবে। কৃষিজমি ধ্বংস করে ড্রেজিংয়ের বালু ফেলার ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বিকল্প জায়গায় বালু ফেলার আহ্বান জানান বক্তারা।

মানববন্ধন ও পথসভায় সভাপতিত্ব করেন বাণীশান্তা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায়। এ সময় বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কৃষক নেতা এস এ রশিদ, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি নান্টু রায়, বাপা মোংলা অঞ্চলের আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ, দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক সঞ্জীব মণ্ডল, অধ্যাপক অসিত সরকার, বাণীশান্তা কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য হিরণ্ময় রায়, সত্যজিত গাইন, কৃষ্ণপদ মন্ডল, সিপিবি নেতা বিশ্বজিৎ মণ্ডল, ইউপি সদস্য পাপিয়া মিস্ত্রি, জয় কুমার, বাপা নেতা নাজমুল হক, শেখ রাসেল, মাহারুফ বিল্লাহ প্রমুখ।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, খুলনার দাকোপ উপজেলার পশুর নদের পারের বাণীশান্তা ইউনিয়নের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি। তবে মোংলা বন্দর চ্যানেলের গভীরতা বাড়ানোর জন্য পশুর নদ খনন করে বালু ফেলতে তাঁদের সেই আবাদি জমি হুকুমদখল করা হয়েছে। এতে জীবিকা হারানোর আশঙ্কায় তাঁরা তাঁদের এ জমিতে বালু ফেলতে দিতে রাজি নন। জমিতে পশুর নদের বালু ফেললে কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত ও বাস্তুচ্যুত হবে বলে দাবি কৃষকদের। তাই বিকল্প জায়গায় বালু ফেলার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা।