আক্কেলপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের নিরীক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে
আক্কেলপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের নিরীক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে

জয়পুরহাটে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হিসাব নিরীক্ষকদের কর্মবিরতি

দশম গ্রেড বাস্তবায়ন, সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন বৈষম্য দূর করাসহ ১১ দফা দাবিতে জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলার হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের নিরীক্ষকেরা (অডিটর) দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে টোকেন পদ্ধতির সব সরকারি বিল আটকে থাকায় সেবাপ্রত্যাশীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরেও কর্মবিরতি পালন করতে দেখা গেছে।

গত বুধবার আক্কেলপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দপ্তরে বসে আছেন। দুজন নিরীক্ষক থাকলেও তাঁরা দাবি আদায়ের জন্য কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁদের টেবিলে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি বিল পড়ে আছে। কিন্তু নিরীক্ষকেরা বিলগুলো পাস করছেন না। তবে সরাসরি অনলাইন সিস্টেমের বিল হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তারা পাস করছেন।

এ কার্যালয়ের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার তথ্যমতে, ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৭৪টি বিলের প্রায় কোটি টাকা আটকে আছে। অন্য উপজেলাগুলোর হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে একইভাবে টোকেন পদ্ধতির বিলগুলো ছাড়া হচ্ছে না।

আক্কেলপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের নিরীক্ষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ২০১৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিটে তাঁদের পদকে ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার রায় দেওয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় এতে সম্মতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চক্রের কারণে তাঁরা কেউ ১০ম গ্রেডে উন্নীত হতে পারেননি। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় থাকার পরও অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত না করা আদালত অবমাননা ও চরম বৈষম্য মনে করছেন। তাই তাঁরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন। তবে জিও জারি হলে তাঁরা এক মিনিটও কর্মবিরতিতে থাকবেন না। তাঁরা কাজ করতে চান, সেই সঙ্গে প্রাপ্য ও যৌক্তিক অধিকার চান।

উপজেলা প্রকৌশলী মো. ওয়ালিউল্লাহ শেখ বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের জন্য হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে বিল দাখিল করা হয়েছে। বিলগুলো এখনো পাস করা হয়নি। এ কারণে ঠিকাদারেরা বিলের টাকা পাচ্ছেন না।

আক্কেলপুর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আবু হাসেম মো. মোকাররম হোসেন বলেন, ‘আমাদের দপ্তর থেকে এ মাসে মোট ১৪টি বিল দাখিল করা হয়েছে। হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটররা কর্মবিরতিতে থাকায় তাঁরা বিলের টোকেন দিচ্ছেন না। এতে অর্থ পরিশোধের বিলগুলো আটকে আছে। কবে নাগাদ বিল পাস হবে, তার কোনো নিশ্চয়তাও নেই। আমরা ভোগান্তিতে পড়েছি।’

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা প্রতুল কুমার মণ্ডল বলেন, সব সরকারি বিল তাঁদের কাছে এলে নিরীক্ষকের অনলাইনে তাঁদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টোকেনের মাধ্যমে বিল পাস করে থাকেন। তিনি শুধু অনুমোদন করেন। নিরীক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে সরকারি অর্থ পরিশোধ আপাতত বন্ধ আছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আইবাস প্লাস সার্ভারে যেগুলো বিল হয়, সেগুলো ছাড়া হচ্ছে।

আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের নিরীক্ষকদের কর্মবিরতিতে টোকেন সিস্টেমের সরকারি অর্থ পরিশোধ আপাতত বন্ধ আছে। এতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং সেবাগ্রহীতারা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জয়পুরহাটে হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটররা কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে টোকেন সিস্টেমের বিলগুলো আটকে গেছে।