রাজশাহীর বিমানবন্দর সড়কের পাশে অধিগ্রহণ করা এই জমির তথ্য গোপন করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি নগরের নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায়
রাজশাহীর বিমানবন্দর সড়কের পাশে অধিগ্রহণ করা এই জমির তথ্য গোপন করে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি নগরের নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায়

অধিগ্রহণের জমি খারিজ করেনি সওজ, ৬৩ বছর পর বিক্রি করে দিলেন সাবেক মালিকেরা

রাজশাহীতে সড়ক ও জনপথের (সওজ) অধিগ্রহণ করার ৬৩ বছর পর সেই জমি আবার বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অধিগ্রহণের টাকা নেওয়ার পরও কয়েকজন ব্যক্তি সেই জমি অন্যদের কাছে বিক্রি করেছেন। ক্রেতারা সেই জমি দখল নিতে আসায় নগরের উত্তর নওদাপাড়া মহল্লায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হওয়ার পথে। প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা আদালতে মামলা করেন। কিন্তু সওজের কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সাড়া দিচ্ছেন না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই জমির অবস্থান নগরের আমচত্বর এলাকায় অবস্থিত আহলে হাদিস মাদ্রাসা থেকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল পর্যন্ত বিমানবন্দর সড়কের পশ্চিম পাশে। সেখানে সওজের অধিগ্রহণ করা ৭৩ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের তথ্য গোপন করে বিক্রি করা হয়েছে। এলাকাবাসীর মতে, বিমানবন্দর সড়কসংলগ্ন এই জমির দাম কাঠাপ্রতি এক কোটি টাকার কম নয়। সেই হিসাবে এই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪৪ কোটি টাকা।

গত ১৫ আগস্ট এই ক্রেতারা ওই জমি দখল করতে আসেন। কিন্তু এলাকাবাসীর বাধায় তাঁরা ফিরে যান। এমন অবস্থায় গত ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মতিন, আবদুল মান্নান ও খায়রুল বাশার বাদী হয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত সম্পত্তির ওপর পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরবর্তী ধার্য তারিখ আগামী ৭ জানুয়ারি। মামলার প্রথম ধার্য তারিখ ছিল গত ২৭ অক্টোবর। সেই তারিখে সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আদালতে উপস্থিত হননি।

মামলার আরজি সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর আমচত্বর এলাকার আহলে হাদিস মাদ্রাসা থেকে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল পর্যন্ত ১ দশমিক ৮৭ একরের (১৮৭ শতাংশ) মধ্যে ৯২ শতাংশ জমি ১৯৬১ সালে অধিগ্রহণ করে সওজ। এরপর সংস্থাটি জায়গা বুঝে নেয়। তবে সেখানকার কিছু জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। সওজ কর্তৃপক্ষ তা আর খারিজ করেনি। এ কারণে আগের মালিকের নামে জমি রেকর্ড হয়ে যায়। এই সুযোগে অধিগ্রহণের তথ্য গোপন করে সাবেক মালিক ইমাদ আলী মণ্ডলের উত্তরাধিকারীরা ৩৪ শতাংশ ও কালিপদ মণ্ডলের উত্তরাধিকারীরা ৩৯ শতাংশ জমি গত বছর বিক্রি করেন।

সওজ কর্তৃপক্ষ কেন রেকর্ড সংশোধন মামলা করেনি, এ বিষয়ে জানার জন্য সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা সওজ-রাজশাহীর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যান। তাঁদের একজন এ বি সিদ্দিক বলেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ প্রসঙ্গে তাঁদের বলেন যে তাঁদের প্রধান কার্যালয় মামলা করার অনুমতি দেয়নি। তিনি তাঁদের বিবাদী করে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু মামলা করলে ধার্য তারিখে তাঁরা আর উপস্থিত হননি।
জমির একজন ক্রেতা হাফিজুর রহমান মোল্লা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রেতার কাগজপত্র দেখেই তিনি জমি কিনেছেন। তাঁদের খারিজ-খতিয়ান সবকিছু ঠিক আছে। তিনি বলেন, সওজ অধিগ্রহণ করার পর বাড়তি জমি তিনি কিনেছেন। অধিগ্রহণের পরে অবশিষ্ট জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য সওজের কাছে আবেদন করেছেন। চার মাস পার হয়ে যাচ্ছে, তারা বুঝিয়ে দিতে আসেনি।

এ বিষয়ে সওজ রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হাকিম গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, কোনো যোগসাজশ নয়, এটা ‘মিস’ হয়ে গেছে। আগে তো জমির ব্যাপারে প্রকৌশলীরা এতটা সজাগ ছিলেন না। তাঁর বাবার জমিও খারিজ করা হয়নি, এ রকম আছে। খারিজ না করার সুযোগে সাবেক মালিকেরা রেকর্ড করে নিয়েছেন। এলাকাবাসী মামলা করলেও হাজির না হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই তারিখে তাঁদের প্রস্তুতি ছিল না। আগামী ধার্য দিনে তাঁরা হাজিরা দেবেন। জমি উদ্ধার করবেন।

সওজের অধিগ্রহণ করা জমির ওপর দিয়ে উত্তর নওদাপাড়া মহল্লায় ঢোকার জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন তিনটি রাস্তা ও এলাকাবাসী তিনটি রাস্তা নির্মাণ করেন। ওই এলাকায় একটি কলেজ ও একটি মহিলা মাদ্রাসা রয়েছে। মহল্লার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন।

এলাকার বাসিন্দা আবদুল মান্নান বলেন, ক্রেতারা এই জায়গা ঘিরে নিজেদের দখলে নিলে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হবেন। তাঁদের বের হওয়ার কোনো রাস্তা থাকবে না। তিনি শুনেছেন একজন ক্রেতা নাকি বলেছেন, রাস্তার জন্য জায়গা বাজারমূল্যে কিনে নিতে হবে। সওজ যে জমি একবার কিনেছে, সেই জমি কেন তাঁদের আবার কিনতে হবে? এ জন্যই তাঁরা আইনি ব্যবস্থায় গিয়েছেন।