সারি করে রাখা হয়েছে গাছের গুঁড়ি। পাশে বাঁশের টুকরি। আরও আছে শত শত চাটাই। সেখান থেকে একটি চাটাই তুলে নিয়ে দরাদরি শুরু করলেন ইফতেখার হোসেন। বিক্রেতা শুরুতেই চাইলেন ৪০০ টাকা। অনেকক্ষণ দরদাম করে শেষে ৩০০ টাকায় চাটাইটি কিনে নেন চট্টগ্রাম নগরের হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা ইফতেখার।
ইফতেখারকে পাওয়া গেল সাগরিকা এলাকায়। বিক্রেতা নেসার আহমদের কাছ থেকে তিনি মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত চাটাই ও গাছের গুঁড়ি কিনে নেন। নেসার আহমদ স্থানীয় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তাঁরা দুই ভাই এবার ঈদে মৌসুমি ব্যবসা করছেন। নেসার জানান, মোট চার লাখ টাকার সরঞ্জাম তুলেছেন তাঁরা। এর মধ্যে রয়েছে ভুসি, খইল, গাছের গুঁড়ি, পাটি, চাটাইসহ নানা উপকরণ। গতকাল শনিবার রাত থেকে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।
চার লাখ টাকা উঠে আসবে কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল নেসারের কাছে। খড়ের গাদার দিকে ইঙ্গিত করে এ বিক্রেতা বলেন, আগে খড়ের স্তূপ বড় ছিল। এখন আর নেই বললেই চলে। ফলে আজ রাতের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে গত প্রায় ২৪ ঘণ্টায় তিন লাখ টাকার মতো উঠে এসেছে। গত বছরও তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। সব বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ সময়ে জমে উঠেছে মাংস কাটাকাটির এসব উপকরণের বাজার। চট্টগ্রামের অলিগলি, হাটে হাটে নেসার আহমদের মতো মৌসুমি বিক্রেতারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর ইফতেখার হোসেনের মতো কোরবানিদাতারাও শেষ সময়ে এসে এসব কিনে নিচ্ছেন।
নগরের সাগরিকা ছাড়াও দেওয়ানহাট, আতুরার ডিপো, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, চকবাজার, বহদ্দারহাট, ব্যাটারি গলি, কাজীর দেউড়ি, আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব উপকরণের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। দামে মিলে গেলে কিনে নিচ্ছেন ক্রেতারা। আবার কেউ কেউ দামের বনিবনা না হওয়ায় খালি হাতেই ফিরছেন।
দেওয়ানহাট মোড়ের এক প্রান্তে কোরবানির এসব উপকরণ সাজিয়ে বসেছিলেন মোহাম্মদ রফিক ও নাইমুল ইসলাম। তাঁরা দুজনই পেশায় দিনমজুর। তবে ঈদের আগে এসব পণ্য নিয়ে বসেন। তাঁরা বলেন, দুজনে মোট ১৪ হাজার টাকার চাটাই, গুঁড়ি, টুকরি ও ঘাস কিনে এনেছেন। সকাল থেকে বেশ ভালোই বিক্রি হয়েছে। সব বিক্রি হয়ে গেলে হাজারখানেক টাকা লাভ থাকবে।
দেওয়ানহাট ঘুরে দেখা গেছে, ছোট, মাঝারি ও বড়—তিন রকমের চাটাই বিক্রি হচ্ছে। দাম ২০০ থেকে ৬০০ টাকা। মাংস কাটতে ব্যবহার করা হয় গাছের বিভিন্ন আকারের গুঁড়ি। এসব গুঁড়ির দাম ১০০ থেকে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া সবুজ লম্বা ঘাসের দাম পড়ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। শুকনা খড়ের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা, বিভিন্ন ধরনের ভুসির দাম পড়ছে কেজি ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। টুকরির দাম পড়ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
গতকাল শনিবার বিকেলে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় সাদা রঙের একটি গরু কেনেন আগ্রাবাদের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন। আর আজ তিনি দেওয়ানহাট মোড়ে কিনতে এসেছেন গাছের গুঁড়িসহ বিভিন্ন উপকরণ। তিনি বলেন, গরুর দাম এবার বেশি পড়েছে। গাছের গুঁড়ি কিনতে এসেও মনে হচ্ছে দাম বেশি।
অন্যদিকে বিবিরহাট পশুর বাজারের এক পাশে বসে ছিলেন কয়েকজন মৌসুমি বিক্রেতা। মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত এসব উপকরণের দাম বেশি পড়ছে কি না, জানতে চাওয়া হয়েছিল পাঁচ বিক্রেতার কাছে। তাঁরা বলেন, এটি মৌসুমি ব্যবসা। তাই দাম বাড়তি রাখার কোনো সুযোগ নেই। বিক্রি না হলে পুরোই লোকসান। পরবর্তী সময়ে আর কোনো কাজে আসবে না। ফলে কম লাভেও বিক্রি করছেন তাঁরা।