রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

৯ শিক্ষার্থীকে নানা মেয়াদে শাস্তি, ‘নির্যাতনকারী’ ২ ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থীকে নানা মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এক শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনার তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলেও দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২৫তম সিন্ডিকেটে সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার। এ সময় দুই সহ-উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও মো. হ‌ুমায়ূন কবীরসহ সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন সিন্ডিকেট সদস্য প্রথম আলোকে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অপরাধের শাস্তির বিষয়টি শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনার পর শাস্তির সুপারিশ করা হয়। পরে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার শৃঙ্খলা কমিটির সভা হওয়ার কথা। পদাধিকারবলে শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি উপাচার্য এবং সদস্যসচিব প্রক্টর। তবে গত ১৪ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কমিটির সভা হয়েছে মাত্র দুটি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়েছিল। এই কমিটি প্রায় আট বছর পর গত মঙ্গলবার ছাত্রলীগের ৪ নেতাসহ ১১ জন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে। এগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় গতকাল রাতের সিন্ডিকেট সভায়।

সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মোট ১১ শিক্ষার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সভায় প্রস্তাব ওঠে। ১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ জনকে স্থায়ী ও বাকি ৮ জনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ৪ নেতার মধ্যে ২ জনকে শাস্তি দেওয়া হলেও অন্য ২ নেতাকে সতর্ক ও হল থেকে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষার্থীর আবাসিকতা বাতিল ও সতর্ক করা হয়েছে।

সিন্ডিকেট সদস্যরা জানিয়েছেন, শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহকে। ২০২২ সালের জুনে আইন বিভাগের এক শিক্ষকের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগে তাঁকে ওই সময় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। গতকাল রাতে তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ইয়াসির আরাফাত, নজরুল, মাহিন, শাফিউল্লাহ, আলিফ ও শিশিরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মামলাও চলমান থাকবে। তাঁদের পরিচয়ের বিস্তারিত পাওয়া যায়নি।

ছাত্রলীগের দুই নেতা ছাড় পেলেন কেন

শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ছাত্রলীগের চার নেতাকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল। ১১ জনের মধ্যে বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও ২ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে তেমন শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কমিটি বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্যবিলুপ্ত কমিটির সহসম্পাদক হাসিবুল ইসলাম ওরফে শান্ত, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সিনহা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানকে।

গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তবিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিতের ঘটনায় আইবিএ ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সিনহাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হাসিবুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়। গতকাল রাতের সিন্ডিকেট সভায় শৃঙ্খলা কমিটি তাঁদের দুজনের বিষয়ে যে সুপারিশ করেছিল, তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে অপর দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে মারধর ও ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা নাঈম ও সোলাইমানকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করেছিল শৃঙ্খলা কমিটি। সেই সঙ্গে অনাবাসিক শিক্ষার্থী হওয়ায় তাঁদের দ্রুত হল থেকে অপসারণ করতে বলা হয়। কিন্তু সিন্ডিকেট সভায় সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাদের শুধু হল থেকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ২১ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে নাঈম আলীকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ কারণে হয়তো সিন্ডিকেট সভা বাড়তি ঝামেলা নিতে চায়নি। তবে সোলাইমান পদ না পেলেও নাঈমকে শাস্তি না দেওয়ায় তাঁকেও শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. গোলাম সাব্বির সাত্তারের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।