গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণগুলো হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে গত ২২ দিনের ব্যবধানে ৩টি ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ওই বিস্ফোরণগুলোয় ভবনের একাংশ ধসে পড়াসহ ঘরের দরজা-জানালা উড়ে গেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানিয়েছে, গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণগুলো হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার রামারবাগে একটি দোতলা ভবনের নিচতলায় বিস্ফোরণে পোশাক কারখানার শ্রমিক দম্পত্তি আল আমিন ও সুখী আক্তার দগ্ধ হয়ে মারা যান। বিস্ফোরণে ওই ফ্ল্যাটের ঘরের জানালা ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। আশপাশের কয়েকটি বাড়ির জানালা ভেঙে গেছে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গ্যাস লিকেজ থেকে ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনার ১৪ দিন পর গত ১২ মার্চ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে একটি ১০ তলা ভবনের ৬ তলার ফ্ল্যাটের দরজা–জানালা উড়ে যায়। দগ্ধ হন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ কুলসুম আক্তার ও তিন বছর বয়সী ছেলে খালিদ। শহরের মাসদাইরে অবস্থিত ওই বিস্ফোরণে পাশের তিনটি ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে গেছে। ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, র্যাব ও সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিশ্চিত হয় গ্যাস লিকেজ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দুই দিন পর দগ্ধ গৃহবধূ কুলসুম সন্তান প্রসব করেন।
গতকাল রোববার দুপুরে ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে বিস্ফোরণের আগুনে পোড়া মালামাল ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে। ভবনের ক্ষতিগ্রস্ত অন্য ফ্ল্যাটের দরজা–জানালা ও লিফট মেরামত করা হয়েছে।
দগ্ধ গৃহবধূ কুলসুমের স্বামী ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে মাসুদ পাটোয়ারী জানান, স্ত্রী এখনো শঙ্কামুক্ত নন, সময় লাগবে। ছোট ছেলে এনআইসিইউতে আছে।
নিতাইগঞ্জ শহরের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র। সেই ব্যস্ততম আর কে দাস রোডে গত শনিবার সকালে হঠাৎ একটি দোতলা শত বছরের পুরোনো ভবনে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে আওলাদ হোসেন নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়। দোকানের মালিক, কর্মচারীসহ আহত হন নয়জন। বিস্ফোরণে ওই ভবনের পেছনের অংশ ও তিনটি দোকানের একতলার ছাদ ধসে পড়ে এবং সামনের অংশের বারান্দার রেলিং ভেঙে সড়কে পড়ে যায়।
বিস্ফোরণের পর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সিআইডি ও বোমা ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যায়। তাদের ধারণা, লিকেজ থেকে জমে থাকা গ্যাসের কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
বিস্ফোরণের পর থেকে আর কে দাস রোডে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই ভবন ঘিরে রেখেছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের দলনেতা মো. সেলিম জানান, রাজলক্ষ্মী ভান্ডারের ভেতরে রাতে ও সকালে আগুন ধরেছিল, পানি দিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। তিনি বলেন, ওই গদিঘরের ভেতরে তেল, ঘি, কাঠ, প্লাইউড, রেক, সিমেন্টের প্লাস্টিকের বস্তা রয়েছে। এগুলো গরম হয়ে আগুন ধরে যায়। একটু পরপর পানি দিয়ে আগুন নেভানো হয়।
গত তিন বছরে শত বছরের এই পুরোনো ভবনে এ নিয়ে তিনবার গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিতাইগঞ্জ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা। তিনি বলেন, তিতাসের লোকজন এসে লিকেজ ঠিক করলেও আবার একই জায়গায় এ ঘটনা ঘটল। এই ঘটনার জন্য তিতাস গ্যাস ও ভবনমালিক দায় এড়াতে পারেন না।
পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ‘তিনটি ঘটনায় বিস্ফোরণ বলতে আমরা যা বুঝি, ওই রকম কিছু পাওয়া যায়নি। তবে বারবার যেহেতু দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাই গ্যাস ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। গ্রাহক ও তিতাস গ্যাসকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’