দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় কলেজের প্রধান ফটকে
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় কলেজের প্রধান ফটকে

জোর করে পদত্যাগপত্রে সই আদায়, পরে অধ্যক্ষকে ফিরিয়ে আনলেন শিক্ষার্থীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন অন্তত ৪০ জন। বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁরা অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য করেন। এ ঘটনা গতকাল বুধবার দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি কলেজের।

পরে অধ্যক্ষ মাসুদুল হকের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা শহরের বিজয় চত্বরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে তাঁরা অধ্যক্ষ মাসুদুল হককে কলেজে ফিরিয়ে আসেন।

২০২১ সালের আগস্টে মাসুদুল হক বীরগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি মাসুদুল হক কবি, মুক্তিযুদ্ধ ও লোকসংস্কৃতিবিষয়ক গবেষক হিসেবে পরিচিত।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বেলা ১১টার দিকে জনা চল্লিশেক শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করে অধ্যক্ষ মাসুদুল হকের কক্ষে প্রবেশ করেন। তাঁরা কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান, টিউশন ফি কমানো, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান না হওয়াসহ নানা অভিযোগ তোলেন। একপর্যায়ে অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগের দাবি তোলা হয়। সাদা কাগজে পদত্যাগের আবেদনও লিখে নিয়ে আসেন তাঁরা। পরে অধ্যক্ষকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

দুপুর ১২টায় শহরের বিজয় চত্বরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাসুদুল হক বলেন, ‘কতিপয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এ রকম একটি ঘটনার জন্ম দিল। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই। এর দায় আমার, হয়তো আমি তাঁদের সঠিক শিক্ষাদান করতে পারিনি।’

ব্যক্তিজীবনে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছিলেন না মন্তব্য করে মাসুদুল হক বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে শেখার জায়গা। কোনো শিক্ষক যদি কলেজে অনিয়মিত হন, শিক্ষার্থীদের সঠিক পাঠদান না করেন, সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ব্যক্তি আক্রোশের শিকার হলাম। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেটা বলুন, আমি এখান থেকে চলে যাব। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলা কেন?’

কতিপয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষক অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য এ রকম একটি ঘটনার জন্ম দিল। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।
মাসুদুল হক, অধ্যক্ষ, বীরগঞ্জ সরকারি কলেজ

ব্যক্তিজীবনে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ছিলেন না মন্তব্য করে মাসুদুল হক বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে শেখার জায়গা। কোনো শিক্ষক যদি কলেজে অনিয়মিত হন, শিক্ষার্থীদের সঠিক পাঠদান না করেন, সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ব্যক্তি আক্রোশের শিকার হলাম। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, সেটা বলুন, আমি এখান থেকে চলে যাব। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দিয়ে নোংরা রাজনীতির খেলা কেন?’

ওই কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আগে কলেজ ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে ছিল। স্যারের (অধ্যক্ষ) কাছে তাঁদের কিছু দাবিদাওয়া ছিল। কলেজের কিছু ভাঙাচোরা জিনিসপত্র বিক্রির অর্থও তিনি কলেজের ব্যাংক হিসাবে জমা রেখেছেন। ছাত্রলীগ সেখান থেকে কিছু টাকা দাবি করেছিল। স্যার সেই দাবি মানেননি। মূলত কলেজের তৎকালীন ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী পরিচয় দিয়ে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়েছেন।