‘সিদো-কানহু খুড়খুড়ি ভেতরে, চাঁদ-ভায়রো ঘোড়া ওপরে দেখ সে রে! চাঁদরে! ভায়রো রে! ঘোড়া ভায়য়োরে মুলিনে মুলিনে।’ সিধু-কানু পালকিতে ও চাঁদ-ভৈরব ঘোড়ায় চড়ে বিদ্রোহীদের পাশে থেকে তাঁদের উৎসাহ দিতেন। নেতাদের কাছে পেয়ে বিদ্রোহীদের মনে যে আনন্দ ও আশার আলো দেখা দিত, তারই প্রতিধ্বনি পাওয়া গেছে এই গানে।
আজ রোববার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউপির সাঁওতাল গ্রাম মিরাকাঠালে আয়োজিত সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবসের অনুষ্ঠানে গ্রামের বয়স্ক সাঁওতাল নারীদের এ গান গাইতে শোনা যায়।
দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নারী মাতি মুরমু (৬৫) বলেন, ‘ছোটকালে বাপের কাছে শিখ্যাছি। সিধু-কানু কে, সাঁওতাল বিদ্রোহ কী, জানতাম না। হামাদের কুনু নেতা বা দেবতা হইবেক, এটাই মনে করতুং (করতাম)। দুই বছর থাকি গাঁয়ের অনুষ্ঠানে আসি কিছু কিছু জানিতে পারিছি।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি সাঁওতাল সম্প্রদায়ের স্থানীয় নেতা ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলা শাখার আহ্বায়ক বিরেন বেসরা বলেন, গ্রামের নিরক্ষর নারী-পুরুষ সাঁওতাল বিদ্রোহের ইতিহাস জানে না। এমনকি নতুন প্রজন্মের লেখাপড়া জানা অনেকের কাছেই এ ইতিহাস অপরিচিত। কিন্তু বংশপরম্পরায় গানে গানে বেঁচে আছেন সাঁওতাল বিদ্রোহের নায়কেরা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গণসংগ্রামের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে সংযুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
শোভাযাত্রা, সিধু-কানুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস পালিত হয়। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশ্বনাথ হেমব্রম, ওরাওঁদের দিঘির পরিষদের রাজা জহর লাল এককা, বঙ্গপাল সরদার, জগদিসান সরেন, মাতি মুরমু প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘যে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সাঁওতাল বিদ্রোহ হয়েছিল, ধরন বদলালেও আজও তা বিদ্যমান। যুগ যুগ ধরে আমাদের দখলে থাকা সমাধিস্থল, শ্মশান, মন্দিরের জমি, পুকুর দখলের পাঁয়তারা আজও বন্ধ হয়নি। চলছে নানা রকম নিপীড়ন। এসবের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করেই বেঁচে থাকতে হবে।’
এ ছাড়া সদর উপজেলার দেলবাড়িতে নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়। নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন গ্রামে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ লাল পতাকা মিছিল ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে।