ধামরাই পৌরসভার বর্জ্য ফেলার জায়গা নেই। প্রতিদিনই বর্জ্য ফেলা হচ্ছে পৌরসভা সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে।
ঢাকার ধামরাইয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে প্রতিদিনই ফেলা হচ্ছে ধামরাই পৌরসভার বর্জ্য। ময়লার উৎকট গন্ধে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। বর্জ্যের বিষক্রিয়ায় মহাসড়কের পাশের কয়েকটি গাছও মরে গেছে।
পৌরসভার কর্মকর্তাদের দাবি, ধামরাইয়ের পৌর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নিজস্ব কোন জায়গা বরাদ্দ নেই। বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, উপজেলার মাসিক সভায় একাধিকবার সমস্যা সমাধানে জায়গা বরাদ্দ দিতে অনুরোধ জানানো হলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই সড়কের পাশে ময়লা ফেলতে হচ্ছে।
সম্প্রতি ওই এলাকায় দেখা যায়, একটি ট্রাকে (গার্ভেজ ট্রাক নং-২) করে আনা পৌরবর্জ্য ফেলা হচ্ছে বাংলাদেশ বেতারের মহাশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র ধামরাই সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের একপাশে।
পৌরসভার তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ট্রাক থেকে ময়লা নামানোর কাজ করছেন। ময়লা ফেলার কাজ শেষে সেখান থেকে প্লাস্টিকের বোতলসহ পুনরায় প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহার উপযোগী বিভিন্ন বস্তু প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রাখছেন। দুপুর একটার দিকে পৌরসভার অপর একটি ট্রাককে একই স্থানে ময়লা ফেলতে দেখা যায়।
ময়লা ফেলার কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা জানান, প্রতিদিন পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা সংগ্রহ করা হয়। পর দিন বিভিন্ন সময় পৌরসভার ট্রাকে করে এসব বর্জ্য দুই থেকে তিন দফায় মহাসড়কের এই স্থানটিতে ফেলা হয়। ময়লা আনার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের চালক মো. মাসুম বলেন, প্রতিদিনই এখানে ময়লা ফেলা হয়। ময়লার পরিমাণ অনুসারে দিনে দুইবার কখনো তিনবার ফেলতে হয়।
সড়কের পাশে উন্মুক্তভাবে এসব বর্জ্যে মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরাসহ স্থানীয়দের প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পোহাতে হচ্ছে। দুপুর একটার দিকে ওই এলাকায় বর্জ্যের উৎকট গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে একটি লেগুনার যাত্রীদের নাক চেপে ধরে থাকতে দেখা যায়। ধামরাইয়ের কালামপুর থেকে মোটরসাইকেলযোগে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বিশ্রী গন্ধে ওই এলাকা পার হতে ভীষণ কষ্ট হয়। গন্ধ থেকে বাঁচতে মুখের নিচের ফাঁকা অংশটি হেলমেটের সামনের গ্লাস হাত দিয়ে চেপে ধরে সড়ক পার হই।’
বিভিন্ন সময়ে ময়লার স্তূপটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, আগুনের তাপে এবং বর্জ্যের বিষক্রিয়ায় সড়কের পাশে ১২টি কড়ই জাতীয় গাছ মরে গেছে।
এছাড়া বড় আকৃতির একটি কড়ই গাছের বেশ কয়েকটি ডাল মরে গেছে। ধামরাই উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. মোতালিব আল মোমিন প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য থেকে উৎপন্ন বিষাক্ত তরল বর্জ্য গাছ শিকড় দিয়ে শুষে নেয়। এতে গাছটি একসময় মারা যায়। ইতিমধ্যে দুইবার পৌর কতৃপক্ষকে সড়কের পাশে বর্জ্য না ফেলার জন্য বলা হয়েছে।
বিষয়টি নজরে আনা হলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নয়ারহাট শাখার উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী দেবাশীষ সাহা জানান, তিনি গতকালই এখানে যোগদান করেছেন। মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলার বিষয়টির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।
নিরুপায় হয়ে মহাসড়কের পাশে বর্জ্য পৌরবর্জ্য ফেলতে হয় বলে জানান ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবীর। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের কোন জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
উপজেলার মাসিক সভায় এ সংকট নিরসনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। আমরা যদি ময়লা না নেই তাহলে সবাই বাসার সামনে ময়লার স্তূপ করবে। এতে সংকট আরও বাড়বে।’
পৌর কর্তৃপক্ষকে জায়গা বরাদ্দ না দেওয়ার বিষয়ে ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী প্রথম আলোকে বলেন, এটি মূলত পৌরসভার জমি সংক্রান্ত বিষয়। তারা যদি জমি ব্যবহার করতে চায় তবে জমি কিনে বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জমির ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলার পক্ষ থেকে সরাসরি জমি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।