সিলেট নগরের কালীঘাট এলাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারের রাস্তা ভাঙাচোরা আর ময়লা-আবর্জনায় ভরা
সিলেট নগরের কালীঘাট এলাকার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারের রাস্তা ভাঙাচোরা আর ময়লা-আবর্জনায় ভরা

চার সমস্যার চক্করে সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার

সিলেটের কালীঘাট এলাকায় নগরের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজারের অবস্থান। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুনসহ নানা পণ্য কিনতে এখানে নগর ও আশপাশের জেলা-উপজেলার দোকানিরা প্রতিদিন ভিড় জমান। তবে এখানে আসা ব্যক্তিদের প্রতিদিন ভোগায় যানজট, ভাঙাচোরা রাস্তা আর ময়লা-আবর্জনা। এ ছাড়া সুরমা নদী–তীরবর্তী হওয়ায় সম্প্রতি বর্ষাকালেও বন্যায় নাকাল হতে হচ্ছে এখানকার ব্যবসায়ীদের। এই চার সমস্যার চক্করে দীর্ঘদিন ধরে লোকজন ভুগছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন।

কালীঘাটের বেশ কয়েকজন ক্রেতা-বিক্রেতা বলেন, এলাকার রাস্তাগুলো তুলনামূলকভাবে সরু। অথচ প্রতিদিন এখানে মালামাল পরিবহনে হাজারো ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি আসে। এর বাইরে রাস্তা ধরে রিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের চলাচল তো রয়েছেই। ফলে দিনরাত সমানতালে এখানে যানজট লেগে থাকে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার রাস্তা ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলেই এসব রাস্তায় পানি জমে কাদা তৈরি হয়।

সিলেট নগরের শিবগঞ্জ এলাকার মুদিদোকানদার আজমল আলী এসেছেন তাঁর দোকানের জন্য পাইকারি দরে পণ্য কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, সব সময় যানজট লেগে থাকে। এটা কালীঘাটের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ ছাড়া রাস্তায় ধুলাবালু আর ময়লা থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদায় একাকার হয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে পানি জমে থাকায় এখন কাদা দেখা দিয়েছে। এতে হাঁটতে গিয়ে কাপড় নোংরা হচ্ছে। এ ছাড়া শুষ্ক সময়ে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট থেকে সব সময় ধুলা ওড়ে।

গতকাল বুধবার বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত সরেজমিন দেখা যায়, কালীঘাট পয়েন্টের এক পাশে স্তূপাকারে ময়লা-আবর্জনা জমে আছে। সেখানে ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটে যানবাহন চলছে এঁকেবেঁকে। কালীঘাটের ডাকবাংলো রোড ও শাহচট রোডের স্থানে স্থানে খানাখন্দ আর ছোট ছোট গর্ত। এসব গর্তে পানি জমে আছে। একই সঙ্গে পুরো এলাকা কাদায় একাকার হয়ে আছে। আমজাদ আলী রোডের যত্রতত্র পেঁয়াজ-রসুনের খোসা আর আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেখানে প্রচুর মাছি ভনভন করে উড়ছে।

কালীঘাট এলাকার ব্যবসায়ী নীলাঞ্জন দাশ বলেন, কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে কালীঘাট এলাকায় পানি ঢুকে বন্যা দেখা দিচ্ছে। হাঁটু থেকে কোমরসমান পর্যন্ত পানি হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বন্যার পানি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও তা পূরণ হচ্ছে না।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এলাকাটি সব সময় নোংরা থাকায় মশা-মাছির উৎপাত বেশি। কোনো নলকূপ না থাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটও আছে। নেই কোনো পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। এ ছাড়া পুরো এলাকায় মাত্র একটি টয়লেট। এতে প্রতিদিন এখানে কাজে থাকা অন্তত পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও শ্রমিকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, কালীঘাটে প্রায় ছয় শ থেকে সাত শ পাইকারি দোকান আছে। প্রতিদিন এখানে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের সমাগম হয়। এ ছাড়া এলাকাটিতে পাইকারি দোকানগুলোর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি একাধিক ব্যাংক এবং সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অবস্থান। তাই মানুষের জমায়েত বেশি হয়। কালীঘাট এলাকার ব্যবসায়ী সমিতি ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এখানে যানজট নিরসনে ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

কালীঘাট এলাকার ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিলেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট সংস্কারে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। এ ছাড়া তারা যেন নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে, সেটাও বলেছি। স্থানীয় বাসিন্দারা যেন যত্রতত্র ময়লা না ফেলেন, সে অনুরোধও আমরা বারবার জানাই। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমরা এলাকার যানজট নিরসনে সাধ্যমতো কাজ করছি।’