সিলেট সিটি করপোরেশনের একতরফাভাবে অতি উচ্চ হারে গৃহকর বাতিলের দাবি জানিয়ে মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে নাগরিক সমাজের মোর্চা ‘সিলেটের নাগরিকবৃন্দ’। নতুন গৃহকর প্রকাশের পরপরই এর প্রতিবাদে নাগরিক সমাজের এ মোর্চাটি গঠিত হয়। স্মারকলিপিতে সিলেটের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ৫২ বিশিষ্ট ব্যক্তি স্বাক্ষর করেন।
আজ সোমবার বেলা দুইটায় সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে নাগরিকেরা মিলিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগর ভবনে যান। মেয়র অনুপস্থিত থাকায় তাঁর পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।
এর আগে পঞ্চবার্ষিক কর পুনর্মূল্যায়নের পর গত ৩০ এপ্রিল সিটি করপোরেশন নতুন নির্ধারিত গৃহকর অনুযায়ী ভবনমালিকদের গৃহকর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া শুরু করে। পরে নগরের প্রায় পৌনে এক লাখ ভবনমালিকের গৃহকর ৫ থেকে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। এ নিয়ে নগরজুড়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এর পর থেকে প্রতিদিন নগরের বিভিন্ন সংগঠন গৃহকর বাতিলের দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী গতকাল রোববার দুপুরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে রিভিউর মাধ্যমে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন। তবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নতুন গৃহকর বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, নগরবাসী যে হারে গৃহকর দিয়ে আসছিলেন, তার চেয়ে নতুন করের অঙ্ক কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অংশীজন তথা করদাতাদের কোনোরূপ মতামত ছাড়া যে পদ্ধতিতে করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ও গণতান্ত্রিক নয়।
স্মারকলিপি দেওয়ার সময় ‘সিলেটের নাগরিকবৃন্দ’ সংগঠনের আহ্বায়ক ও সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহর মোতাওয়াল্লি সরেকওম ফতেউল্লাহ আল আমান, জাসদ সিলেট জেলার সভাপতি লোকমান আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল সিদ্দিকী, ব্লাস্ট সিলেটের সাবেক সমন্বয়কারী মো. ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, সাম্যবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ব্রজগোপাল, গণতন্ত্রী পার্টি সিলেটের সভাপতি মো. আরিফ মিয়া, সিপিবি সিলেটের সভাপতি সৈয়দ ফরহাদ হোসেন, বাসদ সিলেটের আহ্বায়ক আবু জাফর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সিলেটের মেয়র বরাবর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে পুরোনো ২৭টি ওয়ার্ডের ৭৫ হাজার ৪৩০টি হোল্ডিংয়ের ওপর আরোপিত নতুন গৃহকর অযৌক্তিক, অন্যায্য ও জনস্বার্থের পরিপন্থী। নগরবাসী যে হারে গৃহকর দিয়ে আসছিলেন, তার চেয়ে নতুন করের অঙ্ক কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। স্টেকহোল্ডার বা অংশীজন তথা করদাতাদের কোনোরূপ মতামত ছাড়া যে পদ্ধতিতে করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ও গণতান্ত্রিক নয়।
নতুন গৃহকরে নগরবাসী উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠিত এবং চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছেন বলে স্মারকলিপিতে বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, মেয়রসহ নির্বাচিত পরিষদ নগরের ভোটারদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে বেশি মাত্রায় কর ধার্য করেছেন, এটা নগরবাসীর কাছে অপ্রত্যাশিত। একটি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও স্বাবলম্বী করে তুলতে নাগরিকদের কর প্রদান করার আবশ্যকতা সর্বজন স্বীকৃত। নির্দিষ্ট সময় পরপর চলমান করহার ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। কিন্তু সহনীয় মাত্রায় কর না বাড়িয়ে একলাফে শতভাগ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত অকল্পনীয়। সিলেট মহানগর কোনো বিচারেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর কিংবা নারায়ণগঞ্জের মতো শিল্পসমৃদ্ধ কোনো জনপদ নয় উল্লেখ করে স্মারকলিপি দেওয়া নাগরিক প্রতিনিধিরা অনতিবিলম্বে নতুন গৃহকর বাতিলের দাবি জানান। চরম গণঅসন্তোষ বিবেচনায় নিয়ে গৃহকর বাড়ানোর কার্যক্রম, ফরম বিতরণ ইত্যাদি বন্ধ করে নগরবাসীর মতামতের ভিত্তিতে যুক্তিসংগত নতুন কর ধার্য করার আহ্বান জানানো হয়।
স্মারকলিপি দেওয়া শেষে ‘সিলেটের নাগরিকবৃন্দ’-এর আহ্বায়ক এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মেয়র বরাবর স্মারকলিপির মাধ্যমে সিলেট নগরবাসীর দাবি জানিয়েছি। সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃক একতরফাভাবে অতি উচ্চ হারে গৃহকর আরোপের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে বাতিল করার দাবি জানিয়েছি। আমরা আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখব। যদি গৃহকর আরোপের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হয়, তাহলে আমরা নগরের সব ওয়ার্ডে ধারাবাহিকভাবে গণসংযোগ, মতবিনিময় করে পরবর্তী আন্দোলনের ঘোষণা দেব।’
এদিকে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী কামাল আহমদ গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নতুন গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বিবৃতিতে বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর ওপর সিটি করপোরেশন কর্তৃক অস্বাভাবিক হারে গৃহকর বৃদ্ধি নাগরিক সমাজে অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই নাগরিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে গৃহকর সহনীয় পর্যায়ে রাখতে মেয়রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
সন্ধ্যা সাতটার দিকে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটায় নগরের কোর্ট পয়েন্টে গৃহকর অযৌক্তিকভাবে বাড়ানোর প্রতিবাদে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনের জেলা সভাপতি কুমার চন্দ্র রায় ও যুগ্ম সম্পাদক মো. ছাদেক মিয়া এ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন।